ইউরিন ইনফেকশন

সারাংশ

মূত্রনালীর সংক্রমণ (UTI) হল সংক্রমণের ব্যাপ্তি বোঝাতে ব্যবহৃত একটা শব্দ যা আমাদের শরীরের মূত্রসংক্রান্ত ব্যবস্থাকে আক্রমণ করে। এগুলো একেবারে কিডনি থেকে শুরু করে মূত্রনালী পর্যন্ত (একটা নল যা মূত্রথলি থেকে মূত্র খালি করে বাইরে ফেলে) মূত্রনালীর যেকোন অংশে জড়াতে পারে। UTI সংঘটনের সবচেয়ে বেশি জায়গা হল মূত্রথলি, তারপর কিডনিগুলো এবং মূত্রনালী। কিডনিগুলো থেকে প্রস্রাব মূত্রথলিতে নলগুলোর মাধ্যমে প্রবাহিত হয় যেগুলোকে বলা হয় কিডনি বা বৃক্ক নালী যা খুব কমই সংক্রামিত হয়।

মহিলাদের ক্ষেত্রে মূত্রনালীর কম দৈর্ঘ্যের কারণে মূত্রনালীর সংক্রমণগুলো পুরুষদের চেয়ে মহিলাদের মধ্যে বেশি ঘটে। শিশুদের ক্ষেত্রে, মূত্রনালীতে কিছু ত্রুটির কারণে UTI গুলো ঘটে (ভেসিকো ইউরিটের‍্যাল [মূত্রথলি থেকে কিডনির নালীগুলোর দিকে উল্টোদিকে প্রস্রাবের প্রবাহ] ত্রুটির মত কাঠামোগত খুঁত), অথবা স্নায়ুতন্ত্রের সমস্যার কারণে (হাইড্রোসেফালাস, মায়েলোমেনিঙ্গোসিল) এবং যৌনাঙ্গ এলাকা পরিস্কার করার ভুল পদ্ধতি, বিশেষতঃ মেয়েদের ক্ষেত্রে। পুরুষরা সাধারণতঃ প্রোস্টেট গ্ল্যাণ্ডে কোনও সংক্রমণের পরে এবং পুংজননতন্ত্রের বিভিন্ন অংশে সংক্রমণগুলির পরে UTI আক্রান্ত হন (যেমন এপিডিডিমাইটিস এবং অরকাইটিস)।
যেসমস্ত ব্যক্তির মূত্রথলিতে দীর্ঘকাল ধরে একটা ক্যাথেটার ঢোকানো আছে, অপর্যাপ্ত পরিমাণ জল পান করেন, শয্যাশায়ী এবং দীর্ঘকাল যাবত অসুস্থ, ডায়াবেটিস আছে, অতি বেশি মাত্রায় যৌনমূলক ক্রিয়াকাণ্ডে নিরত থাকেন, এবং মহিলাদের মধ্যে যাঁরা গর্ভবতী তাঁরা UTI গুলোর লক্ষণ প্রকাশ পাওয়ার বেশি বিপদে থাকেন।

UTI গুলোর উপসর্গগুলোর মধ্যে রয়েছে মূত্রত্যাগ করার সময় জ্বলনের সংবেদন, কাঁপুনিসহ জ্বর, পিঠে এবং তলপেটে ব্যথা এবং মূত্রত্যাগ করার বর্ধিত এবং হঠাৎ তাড়না। ডাক্তাররা রোগবিষয়ক উপসর্গগুলোর উপর ভিত্তি করে UTI গুলো চিহ্নিত করেন এবং সেই সাথে মূত্র বিশ্লেষণ এবং ইমেজিং পরীক্ষাগুলোর সাহায্যেও UTI গুলো চিহ্নিত করেন, যেগুলো রোগের লক্ষণ নিশ্চিত করার জন্য দরকার হতে পারে। মূত্র পরীক্ষার পরে চিহ্নিত মৃদু সংক্রমণগুলো সাধারণতঃ অ্যান্টিবায়োটিকগুলোর একটা কোর্স এবং অন্যান্য ওষুধগুলোর সাহায্যে উপসর্গগুলো প্রশমন করার জন্য চিকিৎসা করা হয়। গুরুতর সংক্রমণে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার দরকার হরে পারে। এধরণের সংক্রমণের জন্য, অ্যান্টিবায়োটিক ইঞ্জেকশন একটা ইন্ট্রাভেনাস ড্রিপের মাধ্যমে (কোনও একটা শিরায় ঢোকানো একটা ড্রিপ, যা ধীরে ধীরে একটা নির্দিষ্ট সময় ধরে রক্তে ওষুধ ঢোকাতে থাকে) প্রয়োগ করা হয়। খুব কম ক্ষেত্রে, কাঠামোগত ত্রুটি যা হয়তো UTI-এর কারণ হতে পারে, সংশোধন করার জন্য কোনও অস্ত্রোপচার দরকার হতে পারে। ওষুধসংক্রান্ত চিকিৎসার সাথে, প্রচুর জল পান করা এবং নিজের স্বাস্থ্যবিধি পালন করার মত স্ব-তত্ত্বাবধান মূত্রনালীর সংক্রমণগুলি থেকে দ্রুত আরোগ্যলাভে সাহায্য করে

উপসর্গ

● প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া বা ব্যথা করা
● তলপেটে বা পেলভিসে ব্যথা
● ঘন ঘন প্রস্রাব চাপা
● খুব অল্প বা একেবারেই প্রস্রাব হয় না
● জ্বর জ্বর ভাব বা কাপুনি দেয়
● প্র্রস্রাবে দুর্গন্ধ হয়
● ঘোলাটে হলুদ বা কমলা রঙের প্রস্রাব হয়

চিকিৎসা

ওষুধ


মূত্রনালীর সংক্রমণগুলো চিকিৎসা করতে এবং সংক্রমণ কিডনি পর্যন্ত ছড়ানোয় বাধা দিতে ওষুধ প্রয়োগ করা হয়। মূত্রনালীর সংক্রমণগুলোর উপসর্গ প্রশমন করার জন্যও ওষুধ প্রয়োগ করা হয়। অ-জটিল (সহজ) মূত্রনালীর সংক্রমণগুলো সাধারণতঃ অ্যান্টিবায়োটিক নেওয়ার পরে সেরে যায়।

সহজ (অ-জটিল) UTI চিকিৎসা করার জন্য ট্রাইমেথোপ্রিম-সালফামেথোক্সাজোল হচ্ছে ব্যবহৃত অ্যান্টিবায়োটিকগুলোর মধ্যে প্রথম পছন্দ।

নাইট্রোফিউর‍্যান্টয়িন হচ্ছে একটা অ্যান্টিবায়োটিক যা ব্যাক্টেরিয়া ধ্বংস করে। ই.কোলাই, স্ট্যাফিলোককাস অরিয়ুস, ক্লেবজিয়েলা, এবং অন্যান্য ব্যাকটেরিয়া দ্বারা ঘটিত UTI গুলোতে এটা দেখা গেছে। এটা মূত্রথলির সংক্রমণের (সিস্টাইটিস) চিকিৎসায় বহুলভাবে ব্যবহৃত হয়।

অ-জটিল UTI গুলোর চিকিৎসায় ব্যবহৃত অন্যান্য অ্যান্টিবায়োটিকগুলোর অন্তর্ভুক্ত ফসফোমাইসিন, ট্রাইমেথোপ্রিম, ফ্লুয়োরোকুইনোলোনস, সিপ্রোফ্লক্সাসিন, ইত্যাদি। ওফ্লক্সাসিন এবং লেভোফ্লক্সাসিন জটিল এবং অ-জটিল উভয় ধরণের UTI গুলোর চিকিৎসায় প্রয়োগ করা হয়।

জটিল UTI গুলোর চিকিৎসা করার জন্য অ্যামক্সিসিলিন এবং অ্যাম্পিসিলিন প্রয়োগ করা হয়। সেফালোস্পোরিনস হল আরও শক্তিশালী অ্যান্টিবায়োটিক (সেকেণ্ড জেনারেশন) যা মূত্রথলিতে অ-জটিল UTI গুলো চিকিৎসার জন্য ব্যবহৃত হয়।

জটিল UTI গুলোর চিকিৎসায় অ্যামিনোগ্লাইকোসাইডস- এক শ্রেণীর অ্যান্টিবায়োটিক, প্রয়োগ করা হয়। বারংবার ঘটা মূত্রনালীর সংক্রমণগুলোর ক্ষেত্রে, ডাক্তার অ্যান্টিবায়োটিকের একটা একক ডোজ রোজ এবং যৌনমিলনের পরে নিতে পরামর্শ দিতে পারেন।
সংক্রমণের কারণে ঘটিত মূত্রথলির ব্যথা, অস্বস্তি, এবং জ্বলন প্রশমন করতে ফেনাজোপাইরিডিন সাহায্য করে।

অস্ত্রোপচার


বারংবার ঘটা UTI গুলোর চিকিৎসার জন্য জন্ম থেকে থাকা অস্বভাবিকতাগুলো (উদাহরণস্বরূপ, ভেসিকোইউরিটের‍্যাল রিফ্লাক্স, নিউরোজেনিক ব্লাডার, এবং ফিমোসিস), অস্বাভাবিকতাগুলো যা জীবনের পরবর্তী কালে গড়ে ওঠে (উদাহরণস্বরূপ, কিডনির পাথর, বাহ্যিক বা অচেনা বস্তুগুলো যেমন ক্যাথেটার, যৌ নসংসর্গ-গর্ভসঞ্চারিত ব্যাধিগুলোর জটিলতা, অন্যান্য সবকিছুর মধ্যে বর্ধিত প্রোস্টেটের কারণে বাধা), টিউমারের কারণে বাধা, সিস্ট অথবা পূঁজ জমা হওয়া এবং অন্যান্য অবস্থার মত ক্ষেত্রগুলোতে অস্ত্রোপচার সম্পাদন করা হয়।

বিভিন্ন ধরণের অস্ত্রোপচারের মধ্যে আছে মূত্রথলির অস্ত্রোপচার যা জটিল UTI গুলোর গুরুতর ক্ষেত্রগুলোতে সম্পাদন করা হয়।
এই অস্ত্রোপচারগুলোর মধ্যে আছেঃ

মূত্রের ভিন্নমুখিতা, ওর্থোটপিক ডাইভার্শন
মূত্রথলির থেকে মূত্রপ্রবাহ ভিন্ন মুখে পরিবর্তিত করা হয় যাতে এটা একটা ব্যাগে জমা হয় যা শরীরের বাইরে যুক্ত করা থাকে।

অগমেন্টেশন সিস্টোপ্ল্যাস্টি
মূত্রথলি বাদ দেওয়া হয়, এবং অন্ত্রের একটা অংশ ব্যবহার করে একটা নতুন মূত্রথলি তৈরি করা হয়।

ইউরিথ্র্যাল স্টেন্ট
মূত্রনালীর সংক্রমণের দ্বারা ঘটিত বন্ধ মূত্রনালী বড় করার জন্য এটা ব্যবহৃত হয়।

লেজার অস্ত্রোপচার
লেজার রশ্মি প্রয়োগ করে এন্ডোস্কোপ অথবা ল্যাপারোস্কোপ-এর মাধ্যমে অস্ত্রোপচারের সাহায্যে বাধাগুলো অপসারিত করা হয়।

লাইফস্টাইল ম্যানেজমেন্ট

● নিয়মিত বিরতিতে অল্প অল্প পানি পান করুন
● টয়লেট করার পর টিস্যু ব্যবহার করার সময় বা পরিষ্কার করার সময় সামনে থেকে পেছনে মুছুন । পেছন থেকে সামনে নয়
● বাসার বাইরে কোথাও টয়লেট ব্যবহার করার পর ওয়াইপ বা সাবান টিস্যু দিয়ে মুছে নিন
● বেশিক্ষন প্রস্রাব ধরে না রেখে নিয়মিত প্রস্রাব করুন
● কিছু গবেষনা দেখা গেছে ক্র্যানবেরি বা বেদানার রস ভালো উপকার দেয়
● কটন আন্ডারওয়ার ব্যবহার করুন, এতে করে ইউরেথ্রিয়া বা তার আশেপাশে ঘাম কম হবে

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক