অস্টিওপোরোসিস

সারাংশ

অস্টিওপোরোসিস হাড়ের এমন একটা অবস্থা যাতে হাড়গুলি সেগুলোর ঘনত্ব হারায় এবং ভঙ্গুর (পলকা) হতে শুরু করে। এই হাড়ের দুর্বল হওয়া এবং পরিণতিস্বরূপ জটিলতাগুলি পুরুষদের তুলনায় মহিলাদের মধ্যে বেশি দেখা যায়। অস্টিওপোরোসিস-এর সবচেয়ে পরিচিত কারণগুলির মধ্যে আছে ঋতুস্রাব বন্ধ হওয়া (মেনোপজ) যা হরমোন-সংক্রান্ত পরিবর্তনগুলির দিকে নিয়ে যায়, ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন ডি-র অভাব, এবং অন্যান্য রোগের উপস্থিতি যা হাড়ের দুর্বলতা ঘটায়।

অস্টিওপোরোসিস থাকা ব্যক্তিদের সবচেয়ে বড় বিপদ হচ্ছে আঘাত এবং পতন থেকে হাড়ে চিড় ধরা (হাড়ভাঙা)। অস্টিওপোরোসিস থাকা ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে দুর্বল হয়ে যাওয়া হাড় এবং এছাড়া বাঁকা হাড়গুলির কারণে একটা ত্রুটিপূর্ণ অঙ্গবিন্যাস খুব দেখা যায়। হরমোন থেরাপি, খাদ্যগত পরিপূরক এবং স্বাস্থ্যকর জীবনধারা চিকিৎসার প্রধান অবলম্বন গঠন করে। যদি প্রথমদিকে রোগের লক্ষণ চিহ্নিত হয়, হাড়গুলি অধিকতর ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া থেকে রক্ষা করা যেতে পারে এবং হাড়ভাঙ্গার বিপদ কমানো যেতে পারে।       

উপসর্গ

● ব্যথা এবং ফোলা (প্রদাহ)
● পিঠে হঠাৎ প্রচণ্ড ব্যথা
● ঝোঁকা, মোচড় দেওয়া এবং শরীর প্রসারিত করতে কষ্ট হওয়া
● ক্লান্তি ও বিষণ্ণতা বোধ হওয়া
● হাড়ভাঙ্গা
● শরির ঝুকে পরা
● ওজন হ্রাস পাওয়া
● চোয়ালে হাড়ের ক্ষয়

চিকিৎসা

অস্টিওপোরোসিস-এর জন্য চিকিৎসার বিভিন্ন ধারা লভ্য। যাই হোক, সবচেয়ে সন্তোষজনক চিকিৎসার মধ্যে রয়েছে মেডিক্যাল চিকিৎসার একটা সংমিশ্রণ এবং জীবনধারাতে পরিবর্তন নিয়ে আসা। চিকিৎসা সর্বদা আরম্ভ হয় রোগীর ইতিহাসের একটা সম্পূর্ণ অনুসন্ধান এবং সমস্ত সম্ভাব্য বিষয়ের একটা বিশ্লেষণ দিয়ে যা রোগটা ঘটাতে পারে। এটা অনুসরণ করে, চিকিৎসার সবচেয়ে সঠিক পদ্ধতি বেছে নেওয়া যেতে পারে। 

ইস্ট্রোজেন এবং হরমোন প্রতিস্থাপন
এটা সেইসমস্ত ব্যক্তিদের জন্য বিধান দেওয়া হয় যাঁদের ইস্ট্রোজেন এবং অ্যান্ড্রোজেন-এর মাত্রাগুলি অপেক্ষাকৃত কম থাকে। যৌন হরমোনগুলির মাত্রাগুলোকে সামান্য বদল করে এবং স্বাভাবিক মাত্রাগুলি ফিরিয়ে এনে, হাড়ভাঙ্গার বিপদ কমানো যেতে পারে। যেসমস্ত মহিলাদের ঋতুস্রাব তাড়াতাড়ি বন্ধ হয়ে গিয়েছে তাঁদের মধ্যে হরমোন প্রতিস্থাপন থেরাপি ব্যবহার করা হল সবচেয়ে কার্যকর। অস্টিওপোরোসিস চিকিৎসা করার সাথে, এটা হার্টের স্বাস্থ্য বজায় রাখতেও সাহায্য করে, গরম ফ্লাশ কমায় (ঋতুবন্ধের সময়ে হঠাৎ করে অল্প সময়ের জন্য গরম লাগা) এবং যৌনসম্বন্ধীয় বৈশিষ্ট্যগুলিও বজায় রাখে। যাই হোক, ইস্ট্রোজেন থেরাপি যোনিপথ-সংক্রান্ত কিছু রক্তপাত অথবা স্তনে প্রদাহ ঘটাতে পারে। প্রোজেস্টেরোন ছাড়া ইস্ট্রোজেন প্রয়োগ করার জ্ঞাপিত জটিলতাগুলির কারণে, এটা জরুরি যে এই রীতির চিকিৎসা একজন স্ত্রীরোগবিশেষজ্ঞ অথবা এন্ডোক্রিনোলজিস্ট-এর সাথে পরামর্শ করার পরেই শুধু শুরু করা উচিত।

বিস্ফস্ফোনেটস
এগুলো হাড় ভাঙ্গা প্রতিরোধ করার দ্বারা সাহায্য করে, এবং ঋতুস্রাব-পরবর্তী মহিলাদের পক্ষে সবচেয়ে কার্যকর। এগুলো মৌখিকভাবে ট্যাবলেট হিসাবে নেওয়া যেতে পারে  অথবা রক্তপ্রবাহের মধ্যে ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে প্রয়োগ করা যেতে পারে। যাই হোক, গলায় জ্বলুনি, বমি বমি ভাব, গিলতে কষ্ট এবং পেটে ব্যথা সহ কতগুলি পার্শপ্রতিক্রিয়া আছে যেগুলি অনুভব করা হতে পারে।

ক্যালসিটোনিন
ক্যালসিটোনিন-এর ব্যবহার হয় প্রধানতঃ ঋতুবন্ধ-পরবর্তী পর্যায়ে হাড়ের ক্ষয় কমানোর জন্য। এটা নাসিকাগত রীতিতে সাধারণতঃ প্রয়োগ করা হয় এবং ইস্ট্রোজেন প্রতিস্থাপন থেরাপির মত একই ধরণের প্রভাব হতে পারে। স্বাভাবিকভাবে বিধান দেওয়া মাত্রা দুটো নাকের ছিদ্রের মধ্যে স্প্রে করার দরকার হয়। যাঁদের অ্যাকিউট মেরুদণ্ডীয় অস্থিসন্ধির চিড়ের উপসর্গ আছে এটা তাঁদের পক্ষে আদর্শ চিকিৎসা হিসাবে দেখা গিয়েছে। এই পদ্ধতি, কিছু ক্ষেত্রে, হাড়ের খনিজের ঘনত্বে একটা সামান্য বৃদ্ধিও দেখিয়েছে। এর অনুষঙ্গী পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে যার মধ্যে ফুস্কুড়ি, মুখে লালচে ভাব, এবং গ্যাস্ট্রোইন্টেস্টিন্যাল (পাকস্থলী এবং অন্ত্রসংক্রান্ত) সমস্যাগুলিও সামিল হতে পারে।

সোডিয়াম ফ্লোরাইড
এটা হচ্ছে একমাত্র জ্ঞাত শক্তি যা কোষগুলিকে উদ্দীপিত করে যা হাড়ের বিকাশ ঘটায় (অস্টিওব্ল্যাস্টিক সেলস) এবং হাড়ের গঠনে সাহায্য করে। পরিচালিত গবেষণাগুলিতে যেখানে পরীক্ষার আওতায় থাকা ব্যক্তিদের সোডিয়াম ফ্লোরাইডের উচ্চ মাত্রা দেওয়া হয়েছিল, তাঁদের মেরদণ্ডে হাড়ের খনিজ ঘনত্ব উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছিল। মেরুদণ্ডীয় অস্থিভঙ্গের হার, অবশ্য, অপরিবর্তিত ছিল। এটা তাঁদের জন্য একটা আদর্শ চিকিৎসা রীতি যাঁদের মৃদু অথবা মাঝারি ধরণের অস্টিওপোরোসিস আছে। এই থেরাপির আর একটা উৎসাহব্যঞ্জক ব্যাপার হল যে এর প্রায় কোনও জ্ঞাত পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। এর বিরুদ্ধে যেটা যায় তা হল যে সোডিয়াম ফ্লোরাইড চিকিৎসা এখনও এফডিএ-এর অনুমোদনসাপেক্ষ।

ক্যালসিয়াম
হাড়ের শক্তির জন্য ক্যালসিয়াম হচ্ছে সর্বাধিক প্রচলিতভাবে জ্ঞাত খনিজগুলির মধ্যে একটি। শরীর নিজের ক্যালসিয়াম তৈরিতে অক্ষম, কিন্তু এটা বেশ নিয়মিতভাবে ক্ষয়প্রাপ্ত হয়, যার ফলে খাদ্যগতভাবে ক্যালসিয়াম গ্রহণ অতীব অপরিহার্য করে তোলে। ক্যালসিয়াম অভাবের ঘটনা মানুষের মধ্যে বাড়ছে, এবং বয়স্কদের মধ্যে বর্ধিত ঘটনার একটা সাধারণ কারণ হচ্ছে ল্যাকটোজের প্রতি একটা অসহিষ্ণুতা গড়ে ওঠার প্রবণতা। ক্যালসিয়াম সম্পূরকগুলির ব্যবহার স্কেলিটাল বোন মাস-এর (অস্থিপঞ্জরের মধ্যে হাড়ের টিস্যুর পরিমাণ) স্থিতিশীলতা দেখিয়েছে, এবং প্রতিদিন একটা প্রস্তাবিত মাত্রা হাড়ের ক্ষয়ের হার কমিয়ে আনতে পারে।

ভিটামিন ডি
ভিটামিন ডি শরীরে ক্যালসিয়ামের শোষণক্রিয়া বাড়ানোর জন্য দরকার। অপর্যাপ্ত ভিটামিন ডি-এর মাত্রা থাকা ব্যক্তিদের জন্য সম্পূরকগুলি সুপারিশ করা হয় যেহেতু এটা ঋতুবন্ধ-পরবর্তী পর্যায়ে হাড়ের ক্ষয় সামাল দেয়। এটা জরুরি যে মাত্রাটা সতর্কভাবে লক্ষ্য করা হোক যেহেতু অত্যধিক ব্যবহার জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে যার মধ্যে আছে বমি বমি ভাব, হাইপারক্যালসেমিয়া এবং কিডনির পাথর।

ব্যায়াম
ব্যায়াম অত্যন্ত উপকারী হতে পারে যখন কারোর তত্ত্বাবধানে এবং ডাক্তারের অনুমোদন চাওয়ার পর করা হয়। যেসমস্ত ব্যায়াম শক্তি বাড়াবার ট্রেনিং-এর উপর মনোযোগ দেয় সেগুলি অস্টিওপোরোসিস থাকা মানুষদের জন্য সুপারিশ করা হয়। এগুলির মধ্যে আছে পায়ের পাতার সামনের উপর ভর করে উবু হয়ে বসা, পুশ-আপ, ডাম্বেল এবং প্রতিরোধক ব্যান্ড ব্যবহার। ব্যায়ামগুলি শক্তি বাড়াতে এবং শরীরকে আরও বেশি নমনীয় করতে সাহায্য করে, সমন্বয়সাধন উন্নত করে এবং হাড়ের ঘনত্ব বাড়াতেও সাহায্য করে।  

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক