ম্যালেরিয়া

সারাংশ

ম্যালেরিয়া মশা বাহিত একটি সাধারণ ব্যাধি। পরিজীবী প্লাসমোডিয়াম-এর কারণে এটি ছড়ায়। মশা এই রোগ বহন করে থাকে। সারা বিশ্বে মানুষের মারণরোগের ক্ষেত্রে এটি অন্যতম প্রধান কারণ। মেয়ে মশা মানুষকে কামড়ালে এই পরজীবী মানুষের দেহে প্রবেশ করে এবং জ্বর, মাথাব্যাথা, বমির মত উপসর্গ দেখা যায়। উপযুক্ত সময়ে নির্ণীত হলে এটি সম্পূর্ণ নিরাময়যোগ্য ব্যাধি। নির্ণয় এবং চিকিৎসার দেরি হলে, সংক্রমণ চূড়ান্ত অবস্থায় পৌঁছলে জটিল পরিস্থিতি হতে পারে। ম্যালেরিয়াজনিত কারণে অধিকাংশ মৃত্যুর কারণ হল, সময়মত সঠিক রোগ নির্ণিত না হওয়া এবং উপযুক্ত চিকিৎসায় বিলম্ব হওয়া। 5 ধরনের প্লাসমোডিয়াম পরজীবী আছে যা থেকে ম্যালেরিয়ার সংক্রমণ হতে পারে। যে চার ধরনের ম্যালেরিয়া আছে তার মধ্যে প্রতি বছর  90% আক্রান্ত ব্যক্তি মৃত্যুর মুখে পড়েন প্লাসমোডিয়াম ফ্যালসিপেরাম- পরজীবীর জন্য।

প্রতি বছর ম্যালেরিয়ার কারণে 800,000 মানুষের মৃত্যু হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) সমীক্ষা বলছে, ম্যালেরিয়ার কারণে প্রতি 45 সেকেন্ডে একটি করে শিশুর মৃত্যু হয়। এই রোগের ইতিহাস সুপ্রাচীন, এবং সুদূর 6000 BC তেও একই ধরনের জ্বরের উল্লেখ পাওয়া যায়। এটি খুবই সাধারণ এবং বহু এলাকায়, বিশেষত গ্রীষ্মপ্রধান দেশের বিস্তৃত এলাকায় ছড়ানো একটি রোগ। 

জানা গিয়েছে, ম্যালেরিয়ার উদ্ভব আফ্রিকায়, এবং সেখান থেকে এই সংক্রমণ বিশ্বের অন্যত্র ছড়িয়ে পড়েছে। মানবজাতির ক্ষেত্রে এটি একটি মারণঘাতী রোগ হিসাবে দেখা দিয়েছে। সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, ম্যালেরিয়া সম্ভবত বানর প্রজাতি থেকে মানব প্রজাতিতে এসেছে। জানা যায় (P.falciparum) পি ফ্যালসিপেরাম  পরজীবীটি গরিলাদের থেকে এসেছে। প্রতি বছর প্রায় 500 মিলিয়ন ম্যালেরিয়া সংক্রমণের ঘটনা ঘটে, যার মধ্যে 85% হয় আফ্রিকার সাহারা মরু অঞ্চলে, এবং আফ্রিকায় যত ম্যারিয়া সংক্রমণ হয় তার 85% ম্যালেরিয়ার একটিই শ্রেণি, পি ফ্যালসিপেরাম থেকে হয়ে থাকে।

ম্যালেরিয়া একটি সাধারণ সংক্রমণ, যা মারণরোগ হতে পারে। গ্রীষ্মপ্রধান বহু দেশে এবং আফ্রিকা, এশিয়া, এবং দক্ষিণ আমেরিকার গ্রীষ্মপ্রধান এলাকায় এটি ভীষণভাবে ছড়িয়ে আছে। পরজীবী প্লাসমোডিয়াম-এর কারণে এটি ছড়ায়। প্লাসমোডিয়াম-এর পাঁচটি প্রজাতি ম্যালেরিয়া ছড়ায়, পি ফ্যালসিপেরাম, পি ভাইভ্যাক্স, পি ওভালে, পি কোলেস এবং পি ম্যালারিয়ে। মেয়ে অ্যানোফিলিস মশা (যা রোগের বাহক বা ভেক্টর) মানুষকে কামড়ালে পরজীবীটি সংক্রমিত হয়। একবার পরজীবীটি মানুষের রক্তে প্রবেশ করলে তা বেড়ে ওঠে এবং যকৃতে তার বৃদ্ধি হতে শুরু করে এবং তারপর এটি লোহিত রক্তকণিকা আক্রমণ করে তাদের ধ্বংস করে।

উপসর্গ

● কাঁপুনির সঙ্গে শীত ভাব
● খুব বেশি জ্বর, মাথাব্যাথা, এবং বমি
● খুব বেশি জ্বর, মাথাব্যাথা, এবং বমি
● কম বয়সী রোগীদের তড়কা হতে পারে
● ঘাম দিয়ে জ্বর ছেড়ে যাওয়া এবং ক্লান্তি এবং অবসন্ন বোধ
● জেগে থাকা এবং সচেতনতা হ্রাস পাওয়া থেকে অচেতনতার সমস্যা
● গভীরভাবে শ্বাস নেওয়া, শ্বাস নেওয়ার অসুবিধা
● রক্তাল্পতা, যেমন ক্লান্তি এবং সাধারণ দুর্বলতা
● জন্ডিসের চিহ্ন, যেমন চোখের সাদা অংশ এবং নখ হলুদ হয়ে যাওয়া, প্রস্রাবের রং অতিরিক্ত হলুদ বর্ণ হয়ে যাওয়া

চিকিৎসা

চিকিৎসা না হলে জটিল ম্যালেরিয়া থেকে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। ম্যালেরিয়ার উপসর্গের সঙ্গে সাধারণ ফ্লু - বা ভাইরাল জ্বরের উপসর্গের মিল আছে এবং যাঁরা আগে আক্রান্ত হননি, তাঁদের ক্ষেত্রে রোগ নির্ণয় সমস্যা থাকে।

ম্যালেরিয়া বিরোধী ওষুধের (অ্যান্টি ম্যালেরিয়াল) শ্রেণিবিভাগ, ম্যালেরিয়া বিরোধী কার্যপ্রণালী এবং রাসায়নিক গঠন। সেগুলি হল:

টিস্যু স্কিজন্টিসাইডস
যকৃতে অবস্থানকারী পরজীবীর ওপরে এই ওষুধ কাজ করে এবং তাদের বৃদ্ধি রোধ করে। ম্যালেরিয়ার চিকিৎসা শুধুমাত্র এই ওষুধে হয় না, কারণ যখন পরজীবীর বৃদ্ধি হয় এবং তারা লোহিত রক্তকণিকা ধ্বংস করতে শুরু করে দেয় তখনই ম্যালেরিয়ার উপসর্গ দেখা দেয়। উপসর্গ দেখার আগে কার্যত সংক্রমণের উপস্থিতি বুঝতে পারা অসম্ভব।

পুনরায় আক্রমণের জন্য টিস্যু স্কিজন্টিসাইডস
পরজীবীদের কিছু যকৃতে উপস্থিত থাকতে পারে যা পুনরায় ম্যালেরিয়ার সংক্রমণ ঘটাতে পারে, তাদের ওপর এই ওষুধ কাজ করে।

ব্লাড স্কিজন্টিসাইডস
পরজীবীদের রক্তের ফর্মের ওপর এই ওষুধগুলি কাজ করে এবং এগুলি হচ্ছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ম্যালেরিয়ারোধী ওষুধ।

গেমিয়োটোসাইটোসাইডস
এই ওষুধগুলি রক্তে উপস্থিত প্রজননক্ষম পরজীবীদের বিরুদ্ধে কাজ করে এবং যে সব মশা আক্রান্ত রোগীদের কামড়ায় তাদের সাহায্যে সংক্রমণ ছড়ানো রোধ করে। এই শ্রেণিভূক্ত কিছু ওষুধ সমস্ত শ্রেণির ম্যালেরিয়ার বিরুদ্ধে সক্রিয় থাকে আর অন্যগুলি কিছু পরজীবীর ওপর কার্যকর থাকে।

স্পোরোন্টোসাইডস
এই ওষুধগুলি মশার মধ্যে উসিস্ট গঠন এবং সংক্রমণ রোধ করে।

যুগ্ম থেরাপি
বিভিন্ন ওষুধ একযোগে ব্যবহার করে ম্যালেরিয়ার কার্যকর চিকিৎসা করা সম্ভব, যেগুলি একসঙ্গে যকৃতে এবং রক্তে উপস্থিত পরজীবীদের ওপর কাজ করে এবং সংক্রমণ বৃদ্ধি রোধ করে। এই প্রক্রিয়াটি হল, একযোগে দুটি অথবা তার বেশি ওষুধ ব্যবহার যেগুলি পরজীবীদের বিভিন্ন অংশকে নিষ্ক্রিয় করে। এই ধরনের চিকিৎসা করলে চিকিৎসার সময় কম হয় এবং প্রতিরোধী পরজীবীদের বৃদ্ধির আশঙ্কা কমায়।

সংক্রমণের প্রকৃতি কী রকম, সংক্রমণ কতটা প্রবল, রোগীর শারীরিক অবস্থা এবং সংশ্লিষ্ট পরিস্থিতি এবং রোগের ওপর একযোগে বিভিন্ন ওষুধ প্রয়োগের পন্থা নির্ভর করে। যে সব ব্যক্তি পি ফ্যালসিপেরাম -এ আক্রান্ত তাঁদের পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে নিরীক্ষণ এবং পরীক্ষা করতে হবে কারণ এটি অপেক্ষাকৃত কঠিন সংক্রমণ এবং ম্যালেরিয়া রোধী ওষুধের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারে।

কোনও প্রসূতি সংক্রমিত হলে তাঁকে বিভিন্ন ওষুধের সম্মিলিতভাবে দিতে হবে কারণ কিছু ম্যালেরিয়ার ওষুধ প্রসূতিদের পক্ষে নিরাপদ নয়। চিকিৎসকদের দেখতে হবে আক্রান্ত ব্যক্তিদের মৃগী, হৃদরোগ, রেনাল ফেলিওর এবং চর্মরোগের ইতিহাস আছে কিনা কারণ এইসব রোগীদের ক্ষেত্রে হয় বিভিন্ন ওষুধ সম্মিলিত ভাবে দিতে হবে না হলে বিভিন্ন ক্ষমতাসম্পন্ন ওষুধ দিতে হবে।।

লাইফস্টাইল ম্যানেজমেন্ট

যখন চিকিৎসা করা হচ্ছে না তখন যদি জীবনযাপনের ক্ষেত্রে মশার সংস্পর্শে আসতে হয় তাহলে তা সংক্রমতি হওয়ার অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়ায়। মশার সংস্পর্শে ন্যূনতম আসা বা একেবারেই না আসা সংক্রমণের ঝুঁকি কমায় বা নির্মূল করে। ম্যালেরিয়ার সংক্রমণ থেকে বাঁচতে হলে মশার সংস্পর্শ ত্যাগ করা ছাড়া জীবনযাপনের আর বিশেষ কোনও ভূমিকা নেই।