কিডনিতে পাথর

সারাংশ

আমাদের কিডনিগুলি হল শরীরের বিষ এবং বর্জ্য পদার্থ পরিস্কার করার আধার। একটা অথবা উভয় কিডনিতে কঠিন বা শক্ত হয়ে যাওয়া ছোট উপাদানগুলির বৃদ্ধি এই প্রক্রিয়াকে অত্যন্ত অস্বস্তিদায়ক এবং বিরক্তিকর করে তোলে। কিডনির পাথরগুলি সাধারণতঃ যত না সংকটজনক তার চেয়ে বেশি ওগুলো বেদনাদায়ক। এটা একটা অবস্থা যা মহিলাদের তুলনায় পুরুষ জনসংখ্যার মধ্যে বেশি দেখা যায়। কিডনির পাথরগুলি ছোট, একটা অথবা উভয় কিডনিতে নুড়ির মত কঠিন বাড়বৃদ্ধি হয়। সেগুলি আকার, প্রকৃতি, রঙ এবং ধরণে ভিন্ন রকমের হয়। এগুলি কিছু খনিজ পদার্থের অবক্ষেপণের (জমা হওয়া) কারণে গড়ে ওঠে। এই অবক্ষেপণ বা সঞ্চয় হচ্ছে ক্যালসিয়াম, ইউরিক অ্যাসিড, কিংবা স্ট্রুভাইট-এর (এক প্রকার খনিজ) উত্থিত মাত্রার ফল অথবা সিস্টিনইউরিয়া বলে কথিত একটা অবস্থার কারণে হয় (প্রস্রাবে সিস্টিন অ্যাসিডের ছিদ্রপথে বার হওয়া)।        

সবচেয়ে বেশি দৃষ্টিগোচর পরিবর্তনগুলি হল প্রস্রাবের রঙ এবং বিশ্রী গন্ধে আর সেই সাথে ঘন ঘন প্রস্রাব বা মূত্রত্যাগ করার প্রয়োজনীয়তা, প্রতিবার অল্প পরিমাণে মাত্র বার হওয়া। তাছাড়া, পিঠের নীচের অংশ, তলপেট, দুই পাশ এবং কুঁচকিতে ব্যথা অনুভব হতে পারে। শরীরে উত্থিত মাত্রার অ্যাসিড এবং খনিজ পদার্থ বাদে, অন্যান্য চিকিৎসা সংক্রান্ত অবস্থা, যেমন হাইপারপ্যারাথাইরয়েডিজম (শরীরে অত্যধিক পরিমাণে প্যারাথাইরয়েড হরমোনের উপস্থিতি), কিডনির অসুখ, হজমের গোলমাল এবং মূত্রনালীর সংক্রমণ (ইউটিআই) এগুলোও ব্যক্তির শরীরে কিডনির পাথর গড়ে ওঠার উচ্চতর ঝুঁকির মুখে দাঁড় করায়। কিডনির পাথরের রোগলক্ষণ নির্ণয় ব্যক্তির চিকিৎসার পূর্ব ইতিহাস, একটা সম্পূর্ণ শারীরিক পরীক্ষা, রক্ত এবং প্রস্রাব পরীক্ষা, এক্স-রে, আল্ট্রাসোনোগ্রাফি এবং সিটি স্ক্যানগুলির উপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত হয়।

উপসর্গ

● লাল, গোলাপী অথবা গাঢ় বাদামী রঙে প্রস্রাবের রঙ বদল
● যখন তখন মূত্রত্যাগ করার তীব্র তাড়না
● প্রস্রাবে অদ্ভুত বিশ্রী গন্ধ
● প্রতিবার মাত্র অল্প অল্প পরিমাণে মূত্রত্যাগ করা
● মূত্রত্যাগ করার সময় মূত্রনালীতে ব্যথা অনুভব
● বমি বমি ভাব এবং বমি করা
● পিঠের নীচের অংশ এবং দুই পাশে ব্যথা
● কুঁচকি অঞ্চল এবং তলপেটে ব্যথা

চিকিৎসা

ব্যথা কখনও কখনও হঠাৎ তীব্রবেগে অথবা থেকে থেকে ঢেউয়ের মত অনুভব করা যেতে পারে, এবং ব্যথার জায়গাও বদলে যেতে পারে যেহেতু পাথর মূত্রাধার প্রণালীর এক অংশ থেকে আর এক অংশে ঘোরাঘুরি করে। প্রচণ্ড, অবিরাম ব্যথা হচ্ছে একটা চিকিৎসাগত জরুরি পরিস্থিতি যার তৎক্ষণাৎ পরিচর্যা করা উচিত।

কিডনির পাথর কতটা বড় এবং কেমন প্রভাবিত করে তার উপর ভিত্তি করে কিডনির পাথরের চিকিৎসার ধারা বিভিন্ন ধরণের হয়। বেশির ভাগ ডাক্তার প্রস্রাবে স্বাভাবিকভাবে পাথর বেরিয়ে যেতে সাহায্য করার একটা অধিকতর রক্ষণশীল (পরম্পরাগত) পদ্ধতি গ্রহণ করা পছন্দ করেন। কিডনির পাথরের জন্য প্রযুক্ত চিকিৎসার বিভিন্ন বিকল্পগুলি হল: 

কিডনির ছোট পাথরের জন্য

এগুলো নিষ্কাশন করা (বার করা) অনেক বেশি সহজ। প্রস্রাবের মধ্য দিয়ে পাথরগুলি বার করে দিতে সাহায্য করার জন্য ডাক্তাররা সাধারণতঃ প্রচুর পরিমাণে তরল পান করতে পরামর্শ দেন। তাঁরা ব্যথা দমন করার জন্য কোন হালকা ব্যথা উপশমকারী ওষুধ (পেইনকিলার), কিংবা পাথর আরও বেশি অনায়াসে বার করার জন্য কোন পেশী শিথিলকারী ওষুধের (মাস্‌ল রিল্যাক্স্যান্ট) বিধান দেবার দ্বারা প্রক্রিয়াটিকে সাহায্য করতে পারেন।

বেশি বড় পাথরের জন্য

কিডনির বেশি বড় পাথরের চিকিৎসা করার জন্য কিছু চিকিৎসাগত প্রক্রিয়ার দরকার হতে পারে:
ওষুধ
গড়ে ওঠা পাথরের প্রকৃতি এবং অবস্থার তীব্রতার উপর নির্ভর করে ওষুধ নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়। এই ওষুধগুলি পাথরের লবণ গলাতে এবং এর আকার কমাতে সাহায্য করে। একটা নির্দিষ্ট সময় পরে, প্রস্রাবের মধ্যে সহজেই বার হয়ে যাওয়ার মত পাথরটা যথেষ্ট  ছোট হয়ে যেতে পারে।

অস্ত্রোপচার
ল্যাপারোস্কোপ বলে কথিত ছোট দূরবীণের মত যন্ত্রগুলি ব্যবহার করে যেগুলি পিঠের মাধ্যমে কিডনিগুলিতে ঢোকানো হয়, যে ব্যক্তি অস্ত্রোপচারের মধ্য দিয়ে যাচ্ছেন তাঁকে অ্যানেস্থেশিয়া প্রয়োগ করে তারপর ডাক্তাররা অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে কিডনির পাথরগুলি নিষ্কাশন করেন। এই প্রক্রিয়া, যাকে পারকিউটেনিয়াস নেফ্রোলিথোটমি বলা হয়, এর জন্য অল্প কিছুদিন হাসপাতালে ভর্তি হওয়া এবং থাকা প্রয়োজন।

যন্ত্রসমূহ (পর্যবেক্ষণ এবং পরীক্ষার জন্য)
যখন পাথরগুলি কিডনি অথবা মূত্রনালীতে বাসা বাঁধে এগুলি ব্যবহার করা হয়। পাথরের সঠিক অবস্থান সনাক্ত করার জন্য একটা সরু পাতলা নল কিডনির নালীর মাধ্যমে মূত্রনালীতে ঢোকানো হয়, যেগুলি (পাথর) তারপর হয় নিষ্কাশিত করা হয় অথবা ভেঙে ফেলা হয়। এই প্রকৃতির বেশির ভাগ প্রক্রিয়াগুলি লোকাল অ্যানেস্থেশিয়া ব্যবহার করে এবং হাসপাতালের বহির্বিভাগের রোগীর প্রতি প্রযোজ্য প্রক্রিয়া হিসাবে সম্পাদন করা হয়।

শক-ওয়েভ থেরাপি
শক ওয়েভগুলি কখনও কখনও ত্বকের মাধ্যমে কিডনির পাথরগুলি ভেঙে ফেলা বা টুকরো করার জন্য পরিবাহিত করা হয় যাতে সেগুলি তারপরে প্রস্রাবের মধ্য দিয়ে বার হয়ে যেতে পারে। এটা একটা পদ্ধতি যা প্রায় এক ঘন্টার মত স্থায়ী হয় এবং কিছু ব্যথার কারণ হতে পারে। প্রক্রিয়াটির পরে, কিছু অস্বস্তি, ক্ষত বা রক্তপাতও হতে পারে।

লাইফস্টাইল ম্যানেজমেন্ট

● প্রচুর পরিমাণে তরল পান করুন
● খাবার যেগুলি আগের বারে গঠিত যেধরণের কিডনির পাথরগুলি গড়ে উঠতে সাহায্য করেছে সেগুলি এড়িয়ে খাদ্যতালিকার পরিবর্তন করুন
● উচ্চতা এবং বয়সের সঙ্গে মানানসই ওজন সামলানো এবং বজায় রাখুন
● রক্ত এবং প্রস্রাবে খনিজ পদার্থ এবং ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা পর্যবেক্ষণ করার জন্য নিয়মিত স্বাস্থ্য এবং রক্ত পরীক্ষা করুন
● সপ্তাহে মদ্যপানের মাত্রা 14 ইউনিটের কম রাখুন
● ইউটিআইগুলিকে বাধা দেবার জন্য স্বাস্থ্য সচেতন হওয়া এবং ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যবিধি বজায় রাখা জরুরি, যা একবার আপনার কিডনিতে পাথর হলে আরও বেশি সহজে পাকড়াও করতে পারে

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক