গ্যাস্ট্রাইটিস

সারাংশ

গ্যাস্ট্রাইটিস পরিপাক নালীর একটি অতি সাধারণ রোগ। পাকস্থলীর ভিতরের আস্তরণের প্রদাহ এবং জ্বালার কারণে এই রোগ হয়। পাকস্থলীর এই প্রদাহের জন্য পেটের উপর দিকে ব্যথা, জ্বালা, বুকজ্বালা, ঢেকুর তোলা, খাদ্য ওগরানো, বমির ভাব এবং কখনও কখনও বমি হয়। দীর্ঘ দিন ধরে বেদনা-নাশক ওষুধ খাওয়া (এন-এস-এ-আই-ডি'স), ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ, ধূমপান করা, মদ্যপান করা এবং কয়েকটি অটো-ইমিউন পরিস্থিতির ফলাফল হল গ্যাস্ট্রাইটিস। এই রোগ অনেক সময় কয়েক বছর ধরে চলতে থাকে। এন্ডোস্কোপি করে এই রোগ নির্ণয় করা হয়। এর চিকিৎসার উপায়গুলি হল এন্টাসিড খাওয়া, এন্টি-ব্যাকটেরিয়াল চিকিৎসা এবং খাদ্যে পরিবর্তন আনা।

পাকস্থলীর ভিতরের আস্তরণের (মিউকোসা) প্রদাহ বা জ্বালা হচ্ছে গ্যাস্ট্রাইটিস। সুস্থ মানুষের পাকস্থলীতে অ্যাসিড, বিভিন্ন প্রকারের এনজাইম এবং শ্লেষ্মা তৈরি হয়। গ্যাস্ট্রাইটিসের সময় শ্লেষ্মার পরিমাণ কমে যায়, ফলে নিজের তৈরি অ্যাসিডই পাকস্থলীকে আক্রমণ করে। ফলে পেটে ব্যথা এবং জ্বালা হয়। এর সাথে খাবার উগরে দেওয়ার প্রবণতা দেখা যায়। কখনও বমি হয়। খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন এবং ওষুধ দিয়ে গ্যাস্ট্রাইটিসের নিয়ন্ত্রণ এবং নিরাময় করার হার খুবই উচ্চ।

সবার জীবনেই বিভিন্ন কারণে অন্তত একবার এই রোগ হয়। সংক্রমণ, ওষুধ, ধূমপান, মদ্যপান, চাপ এবং শরীরের প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত কারণগুলি গ্যাস্ট্রাইটিস হওয়ার মূল কারণ। এই রোগ দীর্ঘ স্থায়ী কিংবা তীব্র হতে পারে। যদি উপসর্গগুলি খুব বিশিষ্ট ও তীব্র হয় এবং কয়েক দিনের ভিতরে নিরাময় হয় তখন তাকে একিউট গ্যাস্ট্রাইটিস বলা হয়। তুলনায় ক্রনিক গ্যাস্ট্রাইটিসের উপসর্গগুলি খুব কম বা মধ্য মাত্রার হয় এবং রোগ বছরের পর বছর ধরে চলতে থাকে।

উপসর্গ

● পাকস্থলীতে অথবা পেটের উপরের অংশে জ্বালা
● বুকজ্বালা (বুকের মাঝখানে জ্বালা)
● অতিরিক্ত ঢেকুর তোলা
● খাদ্য নালী বা মুখের মধ্যে খাদ্য ওগরানো
● পেট ফোলা
● খাবার পরে পেট ভার
● বমি বমি ভাব
● বমি হওয়া
● বদ হজম হওয়া
● ক্ষুধামান্দ্য হওয়া
● হেঁচকি ওঠা
● পেটের উপরের দিকে বা পাকস্থলীতে তীব্র ব্যথা
● রক্ত বমি
● গাঢ় বা কালো রঙের মল
● মাথা ঘোরা বা দুর্বলতা
● নিঃশ্বাসের অসুবিধা
● দুর্বলতা
● ফ্যাকাসে হয়ে যাওয়া

চিকিৎসা

সৌভাগ্যবশত, সব রকমের গ্যাস্ট্রাইটিসের কার্যকরী চিকিৎসা এবং নিরাময় আছে। গ্যাস্ট্রাইটিস হওয়ার কারণ জানা গেলে তার জন্য নির্দিষ্ট চিকিৎসা করে রোগ সেরে যায়। গ্যাস্ট্রাইটিসের চিকিৎসা তার উপসর্গ অনুযায়ী করা হয় (এন্টাসিড, প্রোটোন-পাম্প ইনহিবিটারস বা এইচ2 ব্লকারস ব্যবহার করা হয়) এবং এন্টিবায়োটিক বা এন্টি-প্যারাসাইটিক ড্রাগগুলি এর নির্দিষ্ট চিকিৎসার অন্তর্গত থাকে।

এন্টাসিড
এই রকমের ওষুধে থাকে ম্যাগনেশিয়াম এবং এলুমিনিয়ামের লবণগুলি, যেগুলি পাকস্থলীর অ্যাসিডকে নিষ্ক্রিয় করে ব্যথা এবং জ্বালা কমায়। তবে, এদের জন্য উদরাময় বা কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে।

প্রোটোন-পাম্প ইনহিবিটারস
এই রকমের ওষুধগুলি পাকস্থলীতে অ্যাসিডের উৎপাদন হ্রাস করে। এতে উপসর্গগুলি কমে যায় এবং জ্বালা ও প্রদাহের উপশম হয়। এই ধরণের কয়েকটি ইনহিবিটার হল প্যান্টোপ্রাজোল, ওমিপ্রাজোল, রাবেপ্রাজোল এবং এসোমিপ্রাজোল।

এইচ2 ব্লকার্স
এই রকমের ওষুধগুলি পাকস্থলীতে অ্যাসিডের উৎপাদন হ্রাস করে কিন্তু এরা প্রোটোন পাম্প ইনহিবিটারগুলির চেয়ে কম কার্যকরী। এই রকমের কয়েকটি ওষুধ হল র‍্যানিটিডিন, নিজাটিডিন এবং ফ্যামোটিডিন।

এন্টিবায়োটিক
যে ব্যাকটেরিয়াগুলি, বিশেষত এইচ পাইলোরি, সংক্রমণ করে পাকস্থলীর আস্তরণের ক্ষতি করে, এই এন্টিবায়োটিকগুলি সেই ব্যাকটেরিয়াগুলির বৃদ্ধি প্রতিরোধ করে এবং তাদের ধ্বংস করে। এই এন্টিবায়োটিকগুলির উদাহরণ হচ্ছে এমোক্সিসিলিন, মেট্রোনিডাজোল অথবা ক্ল্যারিথ্রোমাইসিন। অধিকাংশ ক্ষেত্রে কয়েকটি চিকিৎসা পদ্ধতির সম্মিলন করে এবং সাথে জীবনধারার পরিবর্তন করে গ্যাস্ট্রাইটিসের চিকিৎসা করা হয়।

লাইফস্টাইল ম্যানেজমেন্ট

● নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে বার বার অল্প করে খাবার খান
● দই এবং বাটার মিল্ক হল প্রাকৃতিক প্রোবায়োটিক এবং খাদ্যের সাথে এগুলির অন্তর্গত করা প্রয়োজন
● মদ্যপান ও ধূমপান পরিত্যাগ করুন
● মশলাযুক্ত খাদ্য পরিহার করুন
● অন্যান্য বিকল্প ব্যথা হ্রাস করার উপায়গুলি বা ওষুধগুলি পাকস্থলীতে অ্যাসিডের ক্ষরণ হ্রাস করতে সাহায্য করে
● ওজন হ্রাস করতে পারলে বা বি-এম-আই'র লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারলে গ্যাস্ট্রাইটিসের তীব্রতা হ্রাস করতে সাহায্য করে
● চাপ নিয়ন্ত্রণ করতে যোগ ব্যায়াম, শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম এবং ধ্যান করা খুব উপকারী

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক