মৃগীরোগ

সারাংশ

মৃগীরোগ মস্তিষ্কের একটি দীর্ঘস্থায়ী ব্যাধি। মস্তিষ্কের অস্বাভাবিক কার্যকলাপের জন্য রোগীর খেঁচুনি,  ও অস্বাভাবিক অনুভূতি হতে পারে এবং অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে। নারী-পুরুষ নির্বিশেষে, যে কোন বয়সের, যে কোন জাতির, যে কোন গোষ্ঠীর মানুষের মৃগীরোগ হতে পারে। মৃগীরোগের উপসর্গ খুব সামান্য হতে পারে যেমন শূন্যের দিকে তাকিয়ে থাকা থেকে গুরুতর হতে পারে যেমন তীব্র ভাবে হাত-পা ছোড়া। নিম্ন থেকে মধ্য আয়ের দেশের জনসংখ্যার 75% মানুষ পর্যাপ্ত চিকিৎসা পান না। তারা বিশ্বের অনেক অংশে সামাজিক কলঙ্ক এবং বৈষম্যের শিকার হন। মৃগীরোগের চিকিৎসার অন্তর্গত হল এন্টিএপিলেপটিক ওষুধ। 70% মানুষ এই ওষুধগুলির প্রয়োগে ইতিবাচক সাড়া দিয়েছেন। যে সমস্ত ক্ষেত্রে ওষুধে কোন ফল পাওয়া যায়নি, সে সমস্ত ক্ষেত্রে শল্য চিকিৎসা মৃগীরোগের খেঁচুনির চিকিৎসায় সাহায্য করেছে। কোনও কোনও রোগীকে সারা জীবনই চিকিৎসা চালিয়ে যেতে হয় এবং তার সাথে যে ঘটনাগুলি মৃগীরোগের খেঁচুনি সূচনা করে সেগুলিকে এড়িয়ে চলতে হবে, যেমন আলোর ঝলকানি, উচ্চ শব্দ, অনিদ্রা এবং অতিরিক্ত চাপ।

মৃগীরোগ একটি সাধারণ স্নায়বিক ব্যাধি। বিশ্বব্যাপী জনসংখ্যার প্রায় 50 মিলিয়ন মানুষ বর্তমানে এর দ্বারা প্রভাবিত। 80% এরও অধিক মৃগীরোগে আক্রান্ত মানুষ নিম্ন থেকে মধ্য-আয়ের দেশে বসবাস করেন। এই রোগের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে খেঁচুনি, যা শরীরের একটি অংশ বা পুরো শরীরের অনিয়ন্ত্রিত ঝাঁকুনি। কখনও কখনও এর সাথে রোগী জ্ঞান হারান এবং প্রস্রাব এবং মলত্যাগের উপর তার নিয়ন্ত্রণ থাকে না। মস্তিষ্কের কোষে অত্যধিক বৈদ্যুতিক স্পন্দন বিকিরণের কারণে খেঁচুনি হয়। খেঁচুনি এক বছরে এক থেকে দুই বার হতে পারে আবার একই দিনে একাধিকবার হতে পারে। 

উপসর্গ

● চেতনা হ্রাস
● গুলিয়ে ফেলা
● একটি বিন্দুর দিকে তাকিয়ে থাকা
● হাত ও পা মারাত্মক ঝাঁকুনি
● দৃষ্টি, শ্রবণ এবং স্বাদের মত ইন্দ্রিয়ের মধ্যে বিশৃঙ্খলা
● মেজাজ বদল, যেমন ভয় এবং উদ্বেগ

চিকিৎসা

মৃগীরোগের চিকিৎসা প্রধানত নিম্ন লিখিত বিষয়গুলির উপর নির্ভরশীল:

এন্টি এপিলেপটিক ওষুধ
এন্টিএপিলেপটিক ওষুধগুলিই সাধারণত পছন্দসই চিকিৎসা ব্যবস্থা। প্রতিবেদন থেকে জানা গিয়েছে যে 70% ঘটনায় ওষুধ দিয়েই উপসর্গগুলি বা খেঁচুনি নিয়ন্ত্রণ বা নিরাময় করা গিয়েছে। মস্তিষ্ক থেকে নিঃসৃত হওয়া রাসায়নিকগুলির পরিমাণ পরিবর্তন করে এই ওষুধগুলি খেঁচুনির তীব্রতা এবং পুনরাবৃত্তির হার হ্রাস করতে সাহায্য করে। যদিও এই ওষুধগুলি মৃগীরোগের নিরাময় করতে পারে না, কিন্তু নিয়মিত চিকিৎসায় খেঁচুনির ঘটনার পুনরাবৃত্তির হার হ্রাস করতে। এই ওষুধগুলি বিভিন্ন প্রকারে পাওয়া যায়। চিকিৎসার শুরুতে ওষুধ প্রায়ই অল্প মাত্রায় প্রয়োগ করা হয় এবং খেঁচুনির ঘটনা না থামা পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে ধীরে ধীরে ওষুধের মাত্রা বৃদ্ধি করা হয়। কোন অর্থপূর্ণ প্রতিক্রিয়া বা উন্নতি না দেখা গেলে ডাক্তারবাবু ওষুধ পরিবর্তন করতে পারেন। মৃগীরোগের ধরণের উপরে ওষুধের ধরণ নির্ভর করে, এবং শুধু মাত্র একজন চিকিৎসকই এই ওষুধগুলি প্রেসক্রাইব করতে পারেন। রোগী যদি অন্য কোন ওষুধ নিতে থাকেন তাহলে ডাক্তারকে তা জানাতে হবে।

এই ওষুধগুলির পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়াগুলির অন্তর্গত হল:
● মাথাব্যথা
● শক্তির অভাব
● চুল পড়া বা অত্যধিক চুল বৃদ্ধি
● মাড়ি ফুলে যাওয়া
● চামড়ায় ফুসকুড়ি
● কম্পন

যদি কোন পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া দেখা যায় তাহলে তৎক্ষণাৎ তা ডাক্তারকে জানাতে হবে। সুতরাং, যেমন ভাবে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, ওষুধগুলি ঠিক সেই ভাবেই নিতে হবে। ওষুধের মাত্রা পরিবর্তন করার আগে ডাক্তার এর সাথে কথা বলে নিন। এমন কি ওষুধগুলির জেনেরিক সংস্করণ ব্যবহার করতে হলেও ডাক্তার এর পরামর্শ নিন। ডাক্তার এর অনুমতি ছাড়া ওষুধ বন্ধ করবেন না। যদি রোগীর মেজাজের কোন পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায় তা হলে ডাক্তারকে তা জানান। সময়ের সাথে সাথে অধিকাংশ এন্টিএপিলেপটিক ওষুধই বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং ব্যক্তিটি কোন উপসর্গ ছাড়াই বাঁচতে পারবেন।

শল্য চিকিৎসা
যদি ওষুধগুলি পর্যাপ্ত আরাম না দেয় অথবা বেশ কিছু পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়, তা হলে শল্য চিকিৎসা করার পরামর্শ দেওয়া হতে পারে। অস্ত্রোপচারের সময় মস্তিষ্কের প্রভাবিত অংশ বাদ দেওয়া হয়। অস্ত্রোপচার তখনই করা হয় যখন মস্তিষ্কের খুব ছোট এলাকা প্রভাবিত হয় এবং সেই এলাকা কোন শরীরের কোন গুরুত্বপূর্ণ কাজ, যেমন বাক শক্তি, শ্রবণ শক্তি, চলাফেরা, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের নড়াচড়া ও সমন্বয় ইত্যাদির কোন ক্ষতি করে না।
 

লাইফস্টাইল ম্যানেজমেন্ট

● খেঁচুনির নিয়ন্ত্রণ জরুরী
● নিয়মিত ওষুধ গ্রহণ করুন
● খেঁচুনি বা মৃগীরোগ শুরুর কারণ খুঁজে বের করুন। খুব সাধারণ কারণগুলি হল মদ্যপান, অনিদ্রা, চাপ, উজ্জ্বল আলো জোরে আওয়াজ ইত্যাদি
● খেঁচুনি কবে এবং কখন শুরু হল, এর তীব্রতা কত, কতক্ষণ ধরে হয়েছে এবং তার সাথে খেঁচুনি শুরুর আগে আপনি কি করছিলেন তা বিস্তারিত ভাবে লিখে রাখুন
● ঘুমানোর জন্য তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়ার চেষ্টা করুন
● শ্বাসের হালকা ব্যায়াম করুন
● খেঁচুনি খুব ঘন ঘন হয় তবে এই কাজগুলি করবেন না যেমন, গাড়ি চালানো, সাঁতার কাটা এবং রান্না করা
● ঘরের বাইরে কোন খেলা ধুলার সময় মাথায় হেলমেট ব্যবহার করুন