চিকুনগুনিয়া

সারাংশ

চিকুনগুনিয়া এডিস মশা বাহিত একটি ভাইরাল রোগ। গত এক দশকে আফ্রিকা, এশিয়া, ভারতবর্ষ, দি ক্যরিবিয়ান এবং মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকাতে চিকুনগুনিয়ার প্রাদুর্ভাবের উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধির খবর পাওয়া যাচ্ছে। চিকুনগুনিয়ার ভাইরাস বাহক মশার দ্বারা আক্রান্ত বেশিরভাগ লোকের উপসর্গ দেখা যায়। উপসর্গগুলির মধ্যে রয়েছে জ্বর এবং গাঁটের ব্যথা, যা তীব্র হতে পারে। বেশির ভাগ রোগীর 7-10 দিনের মধ্যে রোগমুক্তি হওয়া শুরু হয়। নবজাতক শিশুদের এবং বৃদ্ধদের জটিলতার আশঙ্কা বেশি। আশে পাশের জমে থাকা জলে এডিস মশার বসবাস এবং বংশবৃদ্ধি হয়। অতএব, আশে পাশের এলাকা পরিষ্কার এবং শুষ্ক রাখা রোগের প্রকোপ কমাতে জরুরী। মশার বংশবৃদ্ধি রোধ করতে কুলার, ফুলের পট, ফুলদানী বা অ্যাকোরিয়ামে জমে থাকা জল প্রত্যেক সপ্তাহে অন্তত 3-4 বার পরিষ্কার জল দিয়ে বদল দিতে হবে।

অন্যান্য প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থাগুলি হচ্ছে মশারীর ব্যবহার, মশা তাড়ানোর মলম/ক্রিম এবং প্রতিরক্ষামূলক পোশাক পরিধান করা। চিকুনগুনিয়া প্রতিরোধ করার কোন টিকা নেই এবং নিরাময়ের জন্য কোন ওষুধ নেই। তাই উপসর্গগুলি হ্রাস করাই চিকিৎসার উদ্দেশ্য হয়। চিকেনগুনিয়া আর ডেঙ্গির উপসর্গগুলি প্রায় একই রকমের। দুই ক্ষেত্রেই জ্বর হয়। সুতরাং, এই দুইটি রোগের মধ্যে বিভ্রান্ত হওয়া সম্ভব। তাই চিকিৎসা শুরু করতে সঠিক রোগ নির্ণয় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সঠিক চিকিৎসা হলে 2-3 সপ্তাহের মধ্যে উপসর্গগুলি কমে যায়। চিকেনগুনিয়ার জটিলতা বিরল। প্রতিরোধী কৌশল দুর্বল সম্প্রদায়গুলির মধ্যে চিকেনগুনিয়ার প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণে খুব সহায়ক হতে পারে।

উপসর্গ

● হঠাৎ জ্বর আসা
● গাঁটে তীব্র ব্যথা
● পেশীর ব্যথা
● মাথাব্যাথা
● বমি বমি ভাব
● পিঠে ব্যথা
● চরম ক্লান্তি
● গাঁটগুলি ফুলে যাওয়া
● মুখে ঘা
● ত্বকে অত্যধিক পিগমেন্টেশান
● ত্বকে ফুসকুড়ি

চিকিৎসা

চিকেনগুনিয়া নিরাময় করার মত কোন নির্দিষ্ট ওষুধ নেই। চিকিৎসার লক্ষ্য থাকে ব্যথার ও জ্বরের মত উপসর্গগুলি হ্রাস করা এবং তাড়াতাড়ি সুস্থ করে তোলা। নির্দিষ্টভাবে চিকেনগুনিয়া প্রতিরোধক কোন টিকাও পাওয়া যায় না। তাই অবস্থা বুঝে ব্যবস্থাই এর চিকিৎসা। ব্যথা ও জ্বর থেকে আরাম পেতে প্যারাসিটামল নেওয়া যেতে পারে। ডাক্তারের অনুমোদন ছাড়া অ্যাসপিরিন জাতিয় বেদনা-নাশক ওষুধ এবং অন্যান্য নন-স্টেরয়ডাল এন্টি-ইনফ্লামেটরি ওষুধ (এন-এস-এ-আই-ডি) নেওয়া চলবে না। এর কারণ হল যে জ্বর যদি ডেঙ্গি থেকে হয়ে থাকে তাহলে অ্যাসপিরিন'এ রক্তক্ষরণের আশঙ্কা বৃদ্ধি পায়। রোগী যদি অন্য কোনও অসুখের জন্য ওষুধ গ্রহণ করতে থাকেন, তাহলে এটা অত্যন্ত জরুরী যে ডাক্তারবাবুর সাথে পরামর্শ না করে চিকেনগুনিয়ার জন্য ওষুধ নেবেন না।

লাইফস্টাইল ম্যানেজমেন্ট

● প্রচুর বিশ্রাম নিন
● যখন একটু সুস্থ বোধ করবেন, তখন ধীরে ধীরে অল্প-স্বল্প নড়া-চড়া করুন। এতে পেশীগুলির জড়তা কেটে যাবে
● আরামদায়ক পরিবেশে বিশ্রাম করুন। খুব গরম জায়গা পরিহার করে চলুন নয়তো গাঁটের ব্যথা খুব বেড়ে যাবে
● ব্যথা-নাশক ওষুধ অবশ্যই পরিহার করতে হবে
● প্রদাহ এবং ফোলা কমাতে ঠাণ্ডা জলের কমপ্রেস নেওয়া যেতে পারে। এতে ব্যথাও কমবে
● আরামদায়ক পরিবেশে বিশ্রাম করুন। খুব গরম জায়গা পরিহার করে চলুন নয়তো গাঁটের ব্যথা খুব বেড়ে যাবে
● প্রচুর পানি ও তরল পদার্থ পান করুন
● সমৃদ্ধ ফল শরীরের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার উন্নতি সাধন করে। তাই কমলালেবু, পেয়ারা, মিষ্টি আলু, লেবু এবং পেঁপের মত ফলগুলি নিরাময় হতে সাহায্য করবে
● রস, বাটার-মিল্ক, ডাবের জল এবং তাজা সবজির রসের মত তরল পদার্থে প্রচুর অত্যাবশ্যক পুষ্টি থাকে, যা আপনার সুস্থ হয়ে ওঠাতে সাহায্য করে
● উচ্চ মাত্রার প্রোটিন এবং ক্যালোরি সমৃদ্ধ খাদ্য গ্রহণ করলে শরীরে শক্তি তৈরি হয়। তবে প্রক্রিয়াকরণজাত খাদ্য এবং মিষ্টি খাবেন না কারণ এতে দেহের সুরক্ষা ব্যবস্থাকে দুর্বল করে দেয়
● নিরাময়ের সময় শরীরের জলের মাত্রা কমিয়ে দেওয়া তরলগুলি, যেমন মদ, কফি বা চা পান করা থেকে বিরত থাকুন

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক