বাতরোগ

সারাংশ

গ্রন্থিবাতে সাধারণত হাড়ের জোড়, হাঁটু, কনুই, নিতম্ব এবং গোড়ালিতে লালচে ভাব এবং প্রদাহ হয়।এটি একটি অটো-ইমিউন পরিস্থিতি যেখানে শরীরের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা নিজস্ব কোষ এবং উপাস্থি ধ্বংস করতে শুরু করে। গ্রন্থিবাতের প্রভাব পড়ে হাড়ের জোড়ে এবং তার আশে পাশের জায়গাগুলিতে এবং এর ফলে চলাফেরাতে অসুবিধা হয়। গ্রন্থিবাত বিভিন্ন প্রকারের হয় কিন্তু রিউমাটয়িড, জ্যুভেনাইল এবং অস্টিও-আর্থ্রাইটিস সব চেয়ে বেশি দেখা যায়। এই রোগের কোন স্থায়ী উপশম নেই, কিন্তু সঠিক ভাবে দেখভাল করতে পারলে কার্যকর ভাবে ব্যথা কম করা যেতে পারে এবং এর সাথে যুক্ত অন্যান্য ঝুঁকিগুলি, যেমন কারডিওভাসকুলার সমস্যা এবং হাড়ের জোরের গুরুতর ক্ষতি, কম করা যায়।

সাধারণ মানুষের ভাষায় গ্রন্থিবাত হল হাড়ের জোড়ের বিভিন্ন প্রকারের রোগ যা স্ত্রী-পুরুষ নির্বিশেষে যে কোন বয়সের মানুষের হতে পারে। আগে গবেষকরা মনে করতেন যে গ্রন্থিবাত একটি বয়স সম্পর্কিত ব্যাধি যা শুধু মাত্র 50 বছরের উপরের মানুষদের হয়। সাম্প্রতিক গবেষণা জানাচ্ছে যে গ্রন্থিবাত যে কোন বয়সের মানুষেরই হতে পারে। সঠিক কথা হল এই যে, এই রোগ সামাজিক-অর্থনৈতিক উদ্বেগগুলির একটি প্রধান হয়ে উঠেছে, কারণ এই রোগ মানুষের চলা-ফেরাতে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করছে।

উপসর্গ

● ব্যথা এবং ফোলা (প্রদাহ)
● হাড়ের জোড় শক্ত এবং স্পর্শকাতর
● সাধারণ জ্বর
● ক্লান্তি ও বিষণ্ণতা বোধ হওয়া
● প্রভাবিত জায়গা স্থানীয় ভাবে লালচে রঙ

চিকিৎসা

যখন আপনি নিয়মিত ভাবে হাড়ের জোড়ে ব্যথা এবং শক্ত হয়ে যাওয়া অনুভব করবেন এবং তার জন্য আপনার চলা-ফেরা সীমাবদ্ধ হয়ে যাবে তখন অবশ্যই ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করবেন। দেরী করবেন না, এটি সারা জীবনের সমস্যা। অতএব যত শীঘ্র ডাক্তারের পরামর্শ নেবেন, ততই ভাল। 

গ্রন্থিবাতের কোন একটি নির্দিষ্ট চিকিৎসা এখনও নেই। তার মানে এই নয় যে চিকিৎসার প্রয়োজন নেই। আপনি শুনে আশ্চর্য হবেন যে অনেক রোগী নিজেই সাময়িক বেদনা-নাশক ওষুধ ইত্যাদি প্রয়োগ করছেন এবং ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করছেন না। এতে রোগ বাড়তে থাকে। অবশ্যই একজন অর্থোপেডিক এবং রিউমাটয়িড আর্থ্রাইটিসের ক্ষেত্রে রিউম্যাটোলজিস্টের সাথে পরামর্শ করতে হবে। 

বিভিন্ন প্রকারের গ্রন্থিবাতের চিকিৎসার জন্য, বিশেষত অস্টিও-আর্থ্রাইটিস এবং রিউমাটয়িড আর্থ্রাইটিস, ডাক্তারেরা ওষুধ দেন যাতে প্রদাহ এবং ফোলা কমে যায়। জায়গাটি লাল এবং ব্যথা হলে গরম এবং ঠাণ্ডা কম্প্রেস ব্যবহার করা হয়। যাদের রোগ অনেকটাই পুরানো হয়ে গিয়েছে তারা দৈনন্দিন বিভিন্ন কার্যকলাপে, যেমন, হাঁটা, সাইকেল চালানো, জগিং করা এবং অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকাতে, অসুবিধা বোধ করেন। ডাক্তাররা এই সমস্ত রোগীদের অন্তত একটি শারীরিক পরিশ্রমের কাজকর্ম করার উৎসাহ দেন, যেমন যোগ ব্যায়াম, সাঁতার কাটা, এরোবিক্স, যেগুলি হাড়ের জোড়ে কম চাপ দেয় এবং বিভিন্ন প্রকারের নড়াচড়া করায়।

গ্রন্থিবাতের চিকিৎসায় ফিজিওথেরাপি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। রোগ বাড়তে থাকলে বিভিন্ন রকমের বিকৃতি এবং হাড়ের অতিরিক্ত বৃদ্ধি হতে পারে। এতে চলা ফেরা করা অসুবিধাজনক হয়ে পড়ে। তাই ফিজিওথেরাপির ব্যায়ামের সাহায্য নিলে চলা ফেরা ভাল হতে পারে এবং শিথিলতা বৃদ্ধি হতে পারে। ব্যথা এবং লিগামেন্টের টেনশান কমানোর জন্য আপনার ডাক্তার আল্ট্রাসনিক তরঙ্গ দিয়ে চিকিৎসা করার পরামর্শও দিতে পারেন। যাদের রিউমাটয়িড আর্থ্রাইটিস আছে তাদের হাড়ের জোড়ে উত্তাপ প্রয়োগ করলে পেশীর টেনশান এবং ব্যথা কমে। কাজেই প্রভাবিত জায়গায় গভীর উত্তাপ প্রয়োগ করা হয়।

লাইফস্টাইল ম্যানেজমেন্ট

● শারীরিক পরিশ্রমের কাজকর্ম করুন
● ফিজিওথেরাপির ব্যায়ামের সাহায্য নিন

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক