সারাংশ
অ্যানজাইনা বা বুকে ব্যথা হল বুকে অস্বস্তি বা অসুবিধা, যেটা অক্সিজেনপূর্ণ রক্ত হৃদযন্ত্রের পেশীতে পৌঁছানোয় ঘাটতি ঘটলেই দেখা যায়। এটা কোন রোগ নয় বরং রোগের উপসর্গ যা হৃদরোগের সতর্কবার্তা জানায়, যেমন, করোনারি আর্টারি ডিজিজ (করোনারি ধমনীর সমস্যাজনিত রোগ), যেখানে ধমনীগুলি সংকীর্ণ হয়ে যাওয়ার কারণে অক্সিজেনযুক্ত রক্ত হৃদযন্ত্রে পৌঁছানোর মাত্রা ধীরে ধীরে কমতে থাকে। যে ধমনীগুলির মাধ্যমে হৃদযন্ত্রে রক্ত সরবরাহ হয়, তাতে প্লাক বা চর্বি জমার ফলে হৃ্দযন্ত্রের পেশীগুলিতে রক্ত ও অক্সিজেন সরবরাহ কমে যায়।
তিন প্রকারের অ্যানজাইনা বা বুকে ব্যথা হতে পারে: স্টেবল বা স্থিতিশীল, আনস্টেবল বা অস্থিতিশীল এবং ভেরিয়েন্ট বা পরিবর্তনশীল বুকে ব্যথা। উপসর্গগুলিও বুকে ব্যথার প্রকার অনুযায়ী বদলাতে থাকে। চেস্ট পেন বা বক্ষঃস্থলে ব্যথা হল এই রোগের সবচেয়ে প্রধান উপসর্গ। বুকে চাপভাব বা পিষে যাওয়া অনুভূতি, ব্যথা আস্তে আস্তে হাত, গলা, চোয়াল, ঘাড়, পিঠের দিকে ছড়িয়ে পড়া, বমি বমি ভাব, ক্লান্তি, ঘন ঘন শ্বাস নেওয়া; ঘেমে যাওয়া এবং মাথা ঘোরা হল এর অন্যান্য উপসর্গ। এক্ষেত্রে অ্যাসিডিটি বা অম্বল অথবা বদহজমের মতোই ব্যথা অনুভূত হতে পারে।
চিকিৎসা
ওষুধ
বুকে ব্যথা হলে, ডাক্তার উপসর্গগুলির ব্যাপারে আপনার কাছে জানতে চাইতে পারেন, যেমন, যখন ব্যথা শুরু হয় আপনি তখন কি করছিলেন, আপনার পরিবারের কারোর এই সমস্যা আছে বা ছিল কিনা, আপনার খাদ্যাভাস, ধুমপানের অভ্যাস, লাইফস্টাইল, শরীরচর্চার অভ্যাস, শরীরের ওজন, উচ্চতা, কোমরের মাপ, বডি মাস ইনডেক্স, প্রভৃতি। এরপর ডাক্তার কতগুলি পরীক্ষাও করাতে বলতে পারেন, যেমন, ইলেকট্রোকার্ডিওগ্রাম (ইসিজি), রক্ত চাপ বা ব্লাড প্রেসার, রক্ত পরীক্ষা বা ব্লাড টেস্ট, ব্লাড লিপিড টেস্ট, বুকের এক্স-রে, করোনারি এঞ্জিওগ্রাফি, কম্পিউটারাইজড্ টোমোগ্রাফি স্ক্যান এবং ইসিজি স্ট্রেস টেস্ট। অস্থিতিশীল বুকে ব্যথার ক্ষেত্রে সঙ্গে সঙ্গে রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা শুরু করা হয় যাতে হার্ট অ্যাটাক না হয়।
বুকে ব্যথার ক্ষেত্রে চিকিৎসায় সফলতা পেতে আপনাকে ডাক্তারের উপর সম্পূর্ণ বিশ্বাস রাখতে হবে এবং আপনি কি কি সমস্যা অনুভব করছেন তা সম্পূর্ণভাবে ডাক্তারকে জানাতে হবে। রোগ নির্ণয় সম্পূর্ণ হলে, ডাক্তার বুকে ব্যথার প্রকার অনুযায়ী সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসা শুরু করে দেন। ওষুধ দেওয়ার সাথে সাথে প্রাথমিক কিছু পরিবর্তনেরও প্রয়োজন হয় যেমন লাইফস্টাইল সামান্য পরিবর্তন, সঠিক খাদ্যাভাস, এছাড়াও কখনো কখনো হার্ট সার্জারীর প্রয়োজন হতে পারে।
প্রথম অ্যানজাইনা অ্যাটাক হবার পর, ডাক্তার সঙ্গে সঙ্গেই গ্লিসারিল ট্রিনিট্রেট (জিএনটি) দেন যাতে আবার অ্যাটাক না হয়। জিএনটি সাবলিঙ্গুয়াল ট্যাবলেট বা স্প্রে হিসাবে পাওয়া যায়। বুকে ব্যথা শুরু হবার পরই সঙ্গে সঙ্গে যেকোন কাজ করাই বন্ধ করতে হবে, বিশ্রাম নিতে হবে, জিএনটি খেতে হবে, যদি প্রথম ডোজ কাজ না করে তবে পাঁচ মিনিট পর আবার ডোজ নিতে হবে। জিএনটি, বেটা ব্লকারস্, ক্যালসিয়াম চ্যানেল ব্লকারস্, প্রভৃতি ওষুধ এই অ্যাটাক রোধ করতে ব্যবহার করা হয়। বুকে ব্যথা হল হার্ট অ্যাটাক হবার প্রবল সম্ভাবনার সতর্কবার্তা; তাই, হার্ট অ্যাটাক রোধ করার জন্য অন্যান্য ওষুধেরও দরকার হতে পারে, যেমন, কম মাত্রায় অ্যাসপিরিন, স্ট্যাটিনস এবং অ্যানজিওটেনসিন-কনভারটিং এনজাইম ইনহিবিটরস।।
অস্ত্রোপচার
ওষুধের দ্বারা যদি অবস্থার প্রতিরোধ না হয় তবে সার্জারীর প্রয়োজন হতে পারে। এর মধ্যে গ্রাফটের দ্বারা রক্তপ্রবাহের গতি পরিবর্তন করা, যেমন, শরীরের অন্য অংশের রক্তবাহের ব্যবহার (করোনারি আর্টারি বাইপাস গ্রাফট সার্জারী) অথবা স্টেন্ট ব্যবহার করে ধমনীকে প্রশস্ত করা (পারকিউটেনিয়াস করোনারি ইন্টারভেন্সনস) রয়েছে। পরিবর্তনশীল বুকে ব্যথার ক্ষেত্রে, রক্ত জমাট বাঁধা রোধ করতে ও হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা কমাতে ওষুধ দেওয়া হয়। তাৎক্ষনিকভাবে রোগীকে অল্প মাত্রায় অ্যাসপিরিন, ক্লপিডোগ্রেল, এবং রক্ত-তরলীকরণ করার ওষুধের ইনজেকশন দেওয়া হয়। যদি অবস্থা আরো জটিল হবার সম্ভাবনা থাকে অথবা অন্য কোন আনুসঙ্গিক সমস্যা সৃষ্টির সম্ভাবনা থাকে তবে সার্জারীর প্রয়োজন পড়ে।
অ্যানজাইনা বা বুকে ব্যথা হল বুকে অস্বস্তি বা অসুবিধা, যেটা অক্সিজেনপূর্ণ রক্ত হৃদযন্ত্রের পেশীতে পৌঁছানোয় ঘাটতি ঘটলেই দেখা যায়। এটা কোন রোগ নয় বরং রোগের উপসর্গ যা হৃদরোগের সতর্কবার্তা জানায়, যেমন, করোনারি আর্টারি ডিজিজ (করোনারি ধমনীর সমস্যাজনিত রোগ), যেখানে ধমনীগুলি সংকীর্ণ হয়ে যাওয়ার কারণে অক্সিজেনযুক্ত রক্ত হৃদযন্ত্রে পৌঁছানোর মাত্রা ধীরে ধীরে কমতে থাকে। যে ধমনীগুলির মাধ্যমে হৃদযন্ত্রে রক্ত সরবরাহ হয়, তাতে প্লাক বা চর্বি জমার ফলে হৃ্দযন্ত্রের পেশীগুলিতে রক্ত ও অক্সিজেন সরবরাহ কমে যায়।