অ্যানিমিয়া

সারাংশ

মানব দেহে লাল রক্ত ​​কোষ'এর (আর-বি-সি) সংখ্যা বা হিমোগ্লোবিন'এর ঘনত্ব হ্রাস হলে যে অবস্থার সৃষ্টি হয় তাকে অ্যানিমিয়া বলা হয়। অ্যানিমিয়া বিভিন্ন প্রকারের হয়, যেমন, লোহা কম থাকার কারণে অ্যানিমিয়া, মেগালোব্লাস্টিক অ্যানিমিয়া, এপ্লাস্টিক অ্যানিমিয়া, এবং আরও অনেক। অ্যানিমিয়ার কারণ বিভিন্ন হতে পারে, যেমন, পরজীবী সংক্রমণের কারণে অধিক রক্তক্ষরণ, মাসিক-কালীন ভারী রক্ত প্রবাহ, গর্ভাবস্থা এবং অপুষ্টি।

অ্যানিমিয়ার উপসর্গগুলি হল ক্লান্তি, দুর্বলতা, ফ্যাকাসে চামড়া এবং শ্বাসের অসুবিধা। এটা ডায়গনিস্টিক পরীক্ষার মাধ্যমে জানা যেতে পারে, যেমন কমপ্লিট ব্লাড কাউন্ট সহ হিমোগ্লোবিন এবং লাল রক্ত ​​কোষ'এর সংখ্যা, পরজীবী সংক্রমণ আছে কি না জানার জন্য মল পরীক্ষা, এবং এপ্লাস্টিক অ্যানিমিয়া হলে হাড়ের মজ্জা পরীক্ষা।

অ্যানিমিয়ার চিকিৎসা এর হওয়ার কারণের উপরে নির্ভর করে। অপুষ্টির কারণে অ্যানিমিয়া হলে চিকিৎসার সাথে সাথে সঠিক খাদ্য এবং লৌহ পরিপূরক দিতে হবে। গুরুতর অ্যানিমিয়া হলে সম্পূর্ণ রক্ত পরিসঞ্চালন করতে হবে। এপ্লাস্টিক অ্যানিমিয়া বা দীর্ঘ স্থায়ী অ্যানিমিয়া থাকলে হাড়ের মজ্জা প্রতিস্থাপনই সর্বশেষ চিকিৎসা। অন্তর্নিহিত কারণের উপরে অ্যানিমিয়ার অবস্থা নির্ভর করে। যে হেতু বেশির ভাগ কারণই চিকিৎসার দ্বারা উপশম করা যায়, তাই ফলাফল ভালই হয়। যদি রোগ নির্ণয় না হয়, তাহলে জটিল অবস্থার সৃষ্টি হতে পারে যেমন সময়ের পূর্বেই প্রসব, নবজাতক শিশুর অ্যানিমিয়া, জন্মের সময়ে ওজন কম, খিঁচুনি এবং দেহের অঙ্গের ক্ষতি, ইত্যাদি।

উপসর্গ

● রক্তাল্পতা
● দুর্বলতা
● নিঃশ্বাস নিতে অসুবিধা
● অস্বস্তিকর অনুভূতি
● মাথা ঘোরা
● কর্মক্ষমতা হ্রাস
● মাথা ব্যথা
● চক, বরফ এবং মাটি প্রভৃতি যা সাধারণত খাদ্য নয় এমন বস্তু খাওয়া বা খাওয়ার ইচ্ছে পোষণ করা

চিকিৎসা

ডাক্তারের নির্দেশ অনুযায়ী লোহা, ভিটামিন বি 12 এবং ফলিক এসিড সম্পূরক খাদ্য গ্রহণ করে সঠিক পুষ্টি বজায় রাখতে হবে। যে ধরণের খাদ্যে লৌহ আছে, সেগুলি খেতে হবে, যেমন সবুজ পাতাযুক্ত সবজি, তাজা ফল, ডিম, মাংস এবং মাছ। ভিটামিন যুক্ত ফল যেমন লেবু, কমলালেবু, আম ইত্যাদি। ভিটামিন-সি সম্পূরক খাবার বাজারে পাওয়া যায়। তবে ডাক্তারের কাছে জেনে নিন আপনার বয়স এবং দেহের ওজন অনুসারে সঠিক মাত্রা কত হবে। বাচ্চাদের পেটের ক্রিমি বিনাশ করতে ছয় মাস অন্তর একবার আলবেনডাজোল ট্যাবলেট খাওয়াবেন। অ্যানিমিয়া থাকুক বা না থাকুক, কিশোর ছেলে এবং মেয়েদের এবং গর্ভবতী মহিলাদের লৌহ এবং ফলিক অ্যাসিড সম্পূরক খাবার দিতে হবে।

অ্যানিমিয়ার শ্রেণীর উপর নির্ভর করে চিকিৎসা : কম অ্যানিমিয়া থাকলে ডাক্তার আপনাকে লৌহ এবং ফলিক অ্যাসিড সমৃদ্ধ খাদ্য গ্রহণ করতে পরামর্শ দেবেন। মাঝারি মাত্রার অ্যানিমিয়া থাকলে ডাক্তার লৌহ এবং ফলিক অ্যাসিড সম্পূরক খাদ্যের পরামর্শ দেবেন। এটি বিশেষ ভাবে কাজ করে যখন আপনার কোন লক্ষণ দেখা না যায় এবং আপনি মৌখিক লৌহ চিকিৎসা কোন পার্শ্ব-প্রতিক্রিয়া ছাড়াই সহ্য করতে পারেন, যেমন গ্যাস্ট্রিক ইনটলারেনস যা থেকে উদরাময় হতে পারে। যদি লৌহ সমৃদ্ধ খাদ্য খেতে না পারেন, তাহলে ডাক্তার ইনজেকশান দিয়ে চিকিৎসা শুরু করবেন। এর জন্য কোন হাসপাতালে ভর্তি হতে হবে না। ইনজেকশান নেওয়ার পরে আপনি বাড়ি চলে যেতে পারেন এবং পরের দিন আবার আসতে পারেন। যদি গুরুতর অ্যানিমিয়া হয়, তাহলে আপনার স্বাস্থ্যের উপর নির্ভর করে ডাক্তার লৌহের ইনজেকশান দেওয়ার পরামর্শ দিতে পারেন বা হাসপাতালে ভর্তি হয়ে আপনার পালস, রক্তচাপ এবং শ্বাসপ্রশ্বাসের মতো জরুরী জিনিসগুলি পরীক্ষা করতে বলতে পারেন। আপনাকে বাইরে থেকে অক্সিজেনও দিতে হতে পারে।

রক্তদান : যদি গুরুতর অ্যানিমিয়া হয় এবং সিকেল সেল অ্যানিমিয়া এবং থ্যালাসেমিয়া থাকে, তাহলে বাইরে থেকে রক্ত দিতেই হবে।

এরিথ্রোপয়েটিন : কিডনির একটি হরমোনের নাম এরিথ্রোপয়েটিন। রক্তের কোষ তৈরিতে এরিথ্রোপয়েটিনের প্রয়োজন হয়। যে সমস্ত রোগীদের কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত থাকায় এরিথ্রোপয়েটিন উৎপাদন করতে সক্ষম হন না, তাদের অ্যানিমিয়ার চিকিৎসার জন্য এরিথ্রোপয়েটিন ব্যবহার করা হয়।

স্প্লিনেক্টমি : পাকস্থলীর নিকটবর্তী একটি ছোট অঙ্গ হচ্ছে স্প্লিন বা প্লীহা। এর কাজ হচ্ছে নতুন লাল রক্ত কোষ তৈরি এবং পুরানো লাল রক্ত কোষগুলি ধ্বংস করা। লাল রক্ত কোষগুলির জীবনকাল হচ্ছে 120 দিন। যাদের অ্যানিমিয়া আছে কখনও কখনও তাদের প্লীহাতে লাল রক্তের কোষের অতিরিক্ত ভাঙ্গন হওয়ার প্রবণতা দেখা যায়। এই ক্ষেত্রে অস্ত্রোপচার করে প্লীহা বাদ দেওয়াই হল পছন্দসই চিকিৎসা ব্যবস্থা (স্প্লিনেক্টমি)।

গর্ভাবস্থায় অ্যানিমিয়ার চিকিৎসা : কম অ্যানিমিয়াতে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা থাকে 9-11 গ্রাম/ডেসি লিটার। আপনার ডাক্তার আপনাকে প্রতিদিন লৌহ এবং ফলিক অ্যাসিডের ট্যাবলেট খাওয়ার পরামর্শ দিতে পারেন। এক মাস পর কোন উন্নতি হল কি না তা জানার জন্য আবার পরীক্ষা করার পরামর্শ দিতে পারেন। মাঝারি মাত্রার অ্যানিমিয়া থাকলে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা হবে 7-9 গ্রাম/ডেসি লিটার। এই ক্ষেত্রে আপনার ডাক্তার প্রথমে অ্যানিমিয়ার কারণ খুঁজে বার করবার চেষ্টা করবেন এবং তারপর লৌহ এবং ফলিক অ্যাসিডের ট্যাবলেট খেতে দিয়ে চিকিৎসা শুরু করবেন। এক মাস পর পরীক্ষা করে দেখবেন সেন হিমোগ্লোবিনের মাত্রা 8-9 গ্রাম/ডেসি লিটার হয়েছে কি না। তিনি লৌহ সম্পূরক ইনজেকশান দিয়ে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা 9 গ্রাম/ডেসি লিটার নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করবেন। তারপর আবার সম্পূরকগুলি খেতে বলবেন। অ্যানিমিয়া গুরুতর হলে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা হবে 7 গ্রাম/ডেসি লিটার এর কম। এই অবস্থায় আপনার ডাক্তার এত কম মাত্রার কারণ খুঁজে বার করবার চেষ্টা করবেন এবং অবিলম্বে লৌহ সম্পূরক ইনজেকশান দেবেন। যদি মাত্রা খুবই কম থাকে তাহলে হাসপাতালে ভর্তি করে রক্ত দেওয়ার পরামর্শ দেবেন।

লাইফস্টাইল ম্যানেজমেন্ট

● তামাক পরিহার করুন
● খাদ্যের সাথে চা পান করবেন না
● লৌহ সমৃদ্ধ খাদ্য গ্রহণ করুন

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক