কিডনি রোগ

সারাংশ

যখন ধীরে ধীরে কিডনির কার্যপ্রাণালী হ্রাস পায় তখন তা দীর্ঘস্থায়ী কিডনির (বৃক্ক) অসুখে (সিকেডি) (ক্রনিক রেনাল ডিজিজ) দাঁড়িয়ে যায়। তার অর্থ, রোগ যখন বাড়তে থাকে তখন কিডনির যা কাজ, অর্থাৎ রক্ত পরিশ্রুতকরণ, তা আর করতে পারে না। সিকেডি-র দু’টি প্রধান কারণ হল, ডায়বিটিস (মধুমেহ) এবং উচ্চ রক্তচাপ। প্রথমাবস্থায় সাধারণত কিডনির অসুস্থতায় কোনও উল্লেখযোগ্য উপসর্গ দেখা যায় না। কাজেই সাধারণত, নিয়মিত রক্ত এবং প্রস্রাব পরীক্ষার সময় তা ধরা পড়ে। তবে, যদি চিকিৎসা সত্ত্বেও কিডনি খারাপ হতে থাকে বা প্রাথমিক পর্যায়ে যদি সিকেডি ধরা না পড়ে তাহলে আক্রান্ত ব্যক্তির গোড়ালি ফুলতে থাকে, প্রস্রাবে রক্ত দেখা যায়, পেশিতে টান ধরে, বারবার মুত্রত্যাগ করতে হয় এবং সামান্য পরিশ্রমেই হাঁফ ধরে যায়।

সিকেডি-র চিকিৎসা রোগের মূল কারণের ওপর নির্ভর করে। সিকেডি নিয়ন্ত্রণে ওষুধের সঙ্গে সঙ্গে জীবনশৈলীর পরিবর্তনের একটি বড় ভূমিকা আছে। যদি কিডনির কার্যপ্রণালী উত্তরোত্তর খারাপ হয় তাহলে আক্রান্ত ব্যক্তি অসুখের অন্তিম পর্যায়ে বা এন্ড স্টেজ রেনাল ডিজিজ (ইএসআরডি/রেনাল ফেলিওর/ কিডনি ফেলিওর) পৌঁছে যান, যখন ডায়লিসিস বা কিডনি প্রতিস্থাপনের প্রয়োজন পড়ে। সমীক্ষায় জানা গিয়েছে সিকেডি আক্রান্ত 50 জনের মধ্যে 1 জনের কিডনি অকেজো বা নষ্ট হয়ে যায়। কিডনির জটিলতা বা তা অকেজো বা নষ্ট হয়ে যাওয়া আটকাতে প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ নির্ণয় এবং চিকিৎসা খুব জরুরি।

উপসর্গ

● ক্ষুধামন্দ্যা
● বমিভাব
● শুষ্ক ত্বক এবং চুলকানি (প্রুরিটাস)
● মাথাধরা
● শরীর খারাপ লাগার অনুভূতি
● ক্লান্তি
● নিজের চেষ্টা না থাকা সত্বেও ওজনহ্রাস
● কিডনির সমস্যার কারণে রক্তে ক্যালসিয়াম এবং ফসফরাসের মাত্রায় হেরফেরের দরুন হাড়ে ব্যাথা
● শরীরে জল জমে যাওয়ার কারণে হাত এবং গোড়ালি ফুলে যাওয়া এবং অসাড় হয়ে যাওয়া
● শরীরে বর্জ্য জমে যাওয়ার জন্য নিঃশ্বাসে দুর্গন্ধ যার সঙ্গে অ্যামোনিয়া বা আঁশটে গন্ধ
● বারবার হিক্কা তোলা
● প্রস্রাবের মাত্রা বৃদ্ধি, বিশেষত রাত্রে
● শাসকষ্ট
● মল-মুত্রের সঙ্গে রক্তক্ষরণ
● চিন্তা-ভাবনা বা  মনোযোগের অভাব
● পেশিতে টান ধরা/ খিল বা স্প্যাজম
● অল্প আঘাতে ক্ষত তৈরি হওয়া
● বারবার জল খাওয়ার প্রবণতা
● ঋতুস্রাব বন্ধ হওয়া (অ্যামিনোরিয়া)
● অনিদ্রা (ইনসমনিয়া)
● ত্বকের রঙের পরিবর্তন হয়ে খুব হাল্কা বা গাঢ় হয়ে যাওয়া
● যৌন ক্রিয়াকলাপে অক্ষমতা

চিকিৎসা

ওষুধ

অন্যান্য সহযোগী সমস্যা, যেমন ডায়বিটিস, উচ্চ রক্তচাপ, বা উচ্চ কোলেস্টরলের কথা মাথায় রেখে ওষুধের পরামর্শ দেওয়া হয়।

● যাঁদের ডায়বিটিস আছে তাঁদের সুষম এবং স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে হবে, নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে, এবং রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা ঠিক রাখার জন্য নিয়মিত রক্ত পরীক্ষা করাতে হবে।
● উচ্চ রক্তচাপের জন্য চিকিৎসক অ্যান্টিজিয়োটেনসিন-কনভার্টিং এনজাইম (এসিই) ইনহিবিটরস নিতে পরামর্শ দিতে পারেন যাতে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে। পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া রোধের জন্য চিকিৎসক অ্যান্টিজিয়োটেনসিন-II রিসেপটর ব্লকার (এআরবি) দিতে পারেন। চিকিসার মূল লক্ষ হচ্ছে রক্তচাপ 140/90 mm/Hg নিচে রাখা।
● কোলেস্টরলের মাত্রা কমানোর জন্য স্ট্যাটিন গ্রহণের পরামর্শ দেওয়া হতে পারে।
● গোড়ালি বা হাত ফুলে গেলে মূত্রবর্ধক ওষুধ দেওয়া হয় এবং নুন এবং জল খাওয়া নিয়ন্ত্রিত করা হয়।
● যে দীর্ঘস্থায়ী কিডনির অসুখে রক্তাল্পতা দেখা দেয়, সেখানে লৌহ পদার্থ উপাদানে সমৃদ্ধ ওষুধ বা খাদ্য গ্রহণ বা হরমোন ‘ইরিথ্রোপোয়েটিন’ ইঞ্জেকশন দেওয়া হয়, যাতে লোহিত রক্ত কণিকা বা আরবিসি উৎপাদন বাড়ে।
● বেশিদিন যাঁরা সিকেডি-তে ভুগছেন তাঁদের জন্য ডায়লিসিস প্রয়োজন হতে পারে।
● বেশিদিন সিকেডি-তে ভুগবার জন্য যাঁদের কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বা অকেজো হয়ে পড়েছে তাঁদের কিডনি প্রতিস্থাপনের প্রয়োজন হতে পারে।


অস্ত্রোপচার

যদি আপনি ডায়লিসিস করতে চান বা কিডনি প্রতিস্থাপনে রাজি না হন, বা সেগুলি আপনার পক্ষে উপযুক্ত না হয় তাহলে আপনার স্বাস্থ্য পরিষেবাকারীরা আপনাকে সহায়ক চিকিৎসার সন্ধান দেবেন। সহায়ক চিকিৎসার মূল লক্ষ হচ্ছে আপনার চিকিৎসা করা, স্বস্তি দেওয়া এবং রেনাল ফেলিওরের উপসর্গ নিয়ন্ত্রণ করা, এবং চিকিৎসার অঙ্গীভূত থাকে আক্রান্ত রোগী এবং তাঁর পরিবারের মানসিক, চিকিৎসা সংক্রান্ত এবং ব্যবহারিক বিষয়গুলির যত্ন নেওয়া।

লাইফস্টাইল ম্যানেজমেন্ট

● দৈনিক অন্তত 30 মিনিট ব্যায়াম করুন এবং সপ্তাহে তা পাঁচদিন করতে হবে
● ধুমপান বন্ধ করুন
● সুষম এবং স্বাস্থ্যকর খাবার খান
● ওজন ঝরান এবং আপনার উচ্চতা এবং বয়স অনুযায়ী ওজন ঠিক রাখুন
● সপ্তাহে মদ্যপানের মাত্রা 14 ইউনিটের কম রাখুন
● নিজের ইচ্ছামত ওষুধ খাবেন না

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক