কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট

সারাংশ

হঠাৎ করে হৃদযন্ত্র তার স্বাভাবিক কাজকর্ম বন্ধ করে দেওয়াকেই কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট বলা হয়, ফলে তৎক্ষণাৎ সংজ্ঞা হারানো, এবং শ্বাস-প্রশ্বাস গ্রহণে সমস্যা হয়। এটি হয় হৃদপিণ্ড যখন তার স্বাভাবিক কাজকর্ম আচমকা বন্ধ করে দেয়, অন্যদিকে, সারা শরীরে রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

অনেকে কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট আর হার্ট অ্যাটাককে এক মনে করেন; হৃদপিণ্ডের পেশীতে রক্ত প্রবাহ যখন বন্ধ হয়ে যায় তাকে হার্ট অ্যাটাক বলে। অনেক সময় হার্ট অ্যাটাকের কারণে কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয়, কিন্তু, দু’টো ব্যাপার কখনই এক নয়। কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হলে, সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসা না হলে, আক্রান্তের কার্ডিয়াক মৃত্যু বা হৃদপিন্ডঘটিত মৃত্যু হতে পারে।

উপসর্গ

কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের লক্ষণ সুস্পষ্ট এবং বিপজ্জনক
● শ্বাস-প্রশ্বাস বন্ধ হয়ে যাওয়া
● নাড়ির স্পন্দন অনুভূত না হওয়া
● হঠাৎ পড়ে যাওয়া
● তৎক্ষণাৎ সংজ্ঞা হারানো
● ঠাণ্ডা ও ফ্যাকাসে ত্বক

চিকিৎসা

অ্যারিথমিয়া অথবা হৃদস্পন্দনের অস্বাভাবিক ছন্দ হৃদপিন্ডের স্বাভাবিক ক্রিয়াকে কার্ডিয়াক অ্যারেস্টে রূপান্তরিত করে। যেসব নোড বিদ্যুৎ তরঙ্গ হৃদয়ে পরিবহন করে সেগুলি অকার্যকর হয়ে গেলে অ্যারিথমিয়ার মতো ঘটনা ঘটে। কিছু ক্ষেত্রে, এরকম ঘটনা সল্পস্থায়ী ও ক্ষতিহীন হয়। কিন্তু, সমস্যাটা যখন বেশ স্পষ্টভাবে জানান দেয়, তখন তা বিপদজ্জনক কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের ঘটনা ঘটায়। অ্যারিথমিয়ার সবচেয়ে সাধারণ ধরণ হলো ভেন্ট্রিকুলার ফাইব্রিলেশন, এক্ষেত্রে হৃদস্পন্দন দ্রুত গতিতে হতে থাকে আর রক্ত পাম্প করার পরিবর্তে ভেন্ট্রিকেলগুলি কাঁপতে থাকে। সুস্থ ব্যক্তির শরীরে এবং সুস্থ হৃদয়ে কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয় না, যদি না বাইরে থেকে সুস্থ ব্যক্তির শরীরে কোনও রকম ঝটকা লাগে, যেমন অভিঘাত, ওষুধের কারণে, মানষিক আঘাত বা আগে থেকে উপস্থিত হৃদযন্ত্রের সমস্যার কারণেও ব্যথা হতে পারে।

কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের আসল কারণ খুঁজে বের করা কোনও ডাক্তারের পক্ষে অত্যন্ত জরুরি। এটি নির্ধারণ করতে যেসব টেস্ট বা পরীক্ষা করা হয়:
● হৃদযন্ত্রের সক্রিয়তা পর্যবেক্ষণ এবং হৃদস্পন্দনে কোনও রকম অস্বাভাবিক ছন্দ ও লক্ষণ ধরা পড়ছে কিনা তা জানার জন্য ইসিজি করা হয়
● খনিজ পদার্থ, রাসায়নিক এবং হরমোনের মাত্রা ঠিক আছে কিনা তা নির্ধারণ করার জন্য রক্ত পরীক্ষা করা হয়

হৃদযন্ত্রের আকার, আয়তন ও স্বাস্থ্য ঠিক আছে কি না, অথবা কোনও ক্ষতি হয়েছে কি না, তা জানার জন্য ইমেজিং টেস্ট বা প্রতিবিম্বকরণ পরীক্ষাগুলি করা হয়।
এক্ষেত্রে যেসব পরীক্ষার সাহায্য নেওয়া হয়:
● হৃদযন্ত্রের প্রকোষ্ঠের অস্বাভাবিকতা এবং রক্ত পাম্প করার ক্ষমতা যাচাই করার জন্য শব্দ তরঙ্গের সাহায্যে ইকোকার্ডিওগ্রাম করা হয়
● রক্তপ্রবাহ ঠিক আছে কিনা তা দেখার জন্য নিউক্লিয়ার স্ক্যান করা হয়
● হৃদযন্ত্রের স্বাস্থ্যের অবস্থা ও তা বিকল হয়ে পড়েছে কিনা তা জানার জন্য বুকের এক্স-রে করা হয়
● হৃদযন্ত্রের ছন্দের অস্বাভাবিকতার কারণ ও রক্তপ্রবাহের পথ কেন অবরুদ্ধ হয়েছে, তা খুঁজে বের করতে এবং হৃদযন্ত্র ঠিক কতোটা সবল আছে, তা নির্ণয় করতে অ্যাঞ্জিওগ্রাম, ইলেক্ট্রোফিজিওলজিক্যাল ম্যাপিং এবং টেস্টিং এবং ইজেকশন ফ্র্যাকশন টেস্টের সাহায্য নেওয়া হয়

কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের চিকিৎসা 2 ধরণের হয়:
● যে অবস্থায় রোগীর কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয়েছে, তাকে তৎক্ষণাৎ সেখানেই চিকিৎসা প্রদান করা জরুরি যাতে তাকে জীবিত রাখা যায় এবং তাঁর বেঁচে থাকা নিশ্চিত করার জন্য প্রাথমিক কয়েক মিনিটের মধ্যে সিপিআর দেওয়া জরুরি, যাতে আক্রান্তের শরীরে অক্সিজেনের প্রবাহ বজায় থাকে এবং চিকিৎসা সাহায্য এসে পৌঁছনো পর্যন্ত রোগীকে বাঁচিয়ে রাখা যায়
● ডিফাইব্রিলেশনের জন্য রোগীকে ইলেক্ট্রিক শক দেওয়া হয় যাতে তার হৃদয় আবার স্বাভাবিক ছন্দে কাজ শুরু করে

হৃদযন্ত্র যাতে সুস্থ থাকে এবং ফের নতুন করে কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের সমস্যা না দেখা দেয় তার জন্য অনবরত চিকিৎসা চালিয়ে যেতে হয় ওষুধ ও অন্যান্য কার্যপ্রণালীর মাধ্যমে
হৃদস্পন্দনের অস্বাভাবিক ছন্দ ঠিক করার জন্য বা অ্যারিথমিয়ার জন্য ওষুধ প্রয়োগ – একে বেটা ব্লকার্স বলা হয় আইসিডি (ইমপ্ল্যান্টেবল কার্ডিয়াক ডিফাইব্রিলেটর) – হৃদস্পন্দনের ছন্দ ঠিক আছে কি না, তা সর্বদা মাপার জন্য একটি ব্যাটারি চালিত যন্ত্র কাঁধের হাড়ে বসানো হয়। হৃদস্পন্দনের ছন্দে অস্বাভাবিকতা এলেই যন্ত্রটি সঙ্গে সঙ্গে শক ওয়েভ বা অভিঘাত তরঙ্গ পাঠিয়ে তা স্বাভাবিক করে তোলে। হৃদযন্ত্রে রক্ত প্রবাহের যে বাধা তৈরি হয়েছে, তা দূর করে পুনরায় স্বাভাবিক করে তুলতে অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি অথবা করোনারি বাইপাস করা হয়। হৃদযন্ত্র অথবা তার প্রকোষ্ঠে কোনও বিকৃতি আসলে তা ঠিক করতে এবং দীর্ঘমেয়াদি ঝুঁকির প্রকোপ কমাতে অস্ত্রোপচার করা প্রয়োজন।

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক